বিশেষ: বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ১০ দেশ, যেখানে কম খরচেই কাটানো যায় সুখের জীবন, জেনেনিন ঠিকানা

উন্নত জীবন এবং নতুন সুযোগের সন্ধানে অনেকেই নিজের দেশ ছেড়ে দূরপরবাসে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন দেখেন। এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে গেলে সাধারণত দেশভেদে প্রচুর পরিমাণে অর্থ এবং একটি শক্তিশালী আর্থিক পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। তবে আশার কথা হলো, বিশ্বের এখনও এমন অনেক সাশ্রয়ী মূল্যের দেশ রয়েছে, যেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম, যা বিশ্বের অন্যতম সস্তা। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় তেমনই কিছু দেশ চিহ্নিত করা হয়েছে।

ইন্টারনেশন্স (InterNations) পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে সাশ্রয়ী জীবনযাত্রার দেশগুলোর একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই সমীক্ষায় বিশ্বব্যাপী ১৭৪টি অঞ্চলজুড়ে ১২,০০০ জনেরও বেশি প্রবাসী অংশ নিয়েছেন। জীবনযাত্রার ব্যয় (Cost of Living), ডিজিটাল জীবন (Digital Life), আবাসন (Housing) ও ভাষা (Language), কর্মজীবনের সম্ভাবনা (Career Prospects), বেতন (Salary) এবং চাকরির নিরাপত্তা (Job Security) – এই গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডগুলোর ওপর ভিত্তি করে দেশগুলোর র‍্যাঙ্কিং করা হয়েছে।

এই র‍্যাঙ্কিংয়ে টানা চার বছর ধরে বিশ্বের ৫৩টি গন্তব্যের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী জীবনযাত্রার জন্য প্রথম স্থানে রয়েছে এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম। শুধু জীবনযাত্রার ব্যয় কম হওয়াই নয়, ভিয়েতনামে কাজের সংস্কৃতিও অত্যন্ত ভালো এবং ভালো বেতনের সুযোগ রয়েছে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, এশীয় দেশগুলো এই বছরের সস্তা দেশের তালিকায় শীর্ষ ১০টির মধ্যে ছয়টি স্থান দখল করে নিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ড এই শীর্ষ ১০-এর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।

ইন্টারনেশন্স সমীক্ষা অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ১০টি দেশ হলো:

১. ভিয়েতনাম: তালিকার শীর্ষে থাকা এই দেশে কেবল ‘কস্ট অফ লিভিং’ কম তাই নয়, এখানকার কাজের সংস্কৃতিও খুব ভালো এবং ভালো বেতনের সুযোগ রয়েছে। প্রবাসীদের মতে এখানকার জীবন চাপমুক্ত, যা কর্মজীবনের জন্য ইতিবাচক।

২. কলম্বিয়া: দ্বিতীয় স্থানে থাকা কলম্বিয়া তার সাশ্রয়ী জীবনযাপন এবং কাজের সুযোগ দিয়ে সর্বদা অভিবাসীদের আকর্ষণ করে।

৩. ইন্দোনেশিয়া: তৃতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ার কাজের সংস্কৃতি ভালো এবং সম্পত্তি বা আবাসন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক সস্তা ও সুবিধাজনক।

৪. পানামা: বিশ্বের চতুর্থ সস্তা এই দেশ অনেক হলিউড মুভিতে স্থান পেয়েছে। এটি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর এবং এখানকার জীবনযাত্রার ব্যয় বেশ কম।

৫. ফিলিপাইন: পঞ্চম সস্তা দেশ হলো ফিলিপাইন। প্রচুর অভিবাসীকে আকর্ষণ করে এই দেশ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেশ জনপ্রিয়।

৬. ভারত: ভারত বিশ্বের ষষ্ঠ সস্তা দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। জীবনযাত্রা, আবাসন এবং ভাষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডগুলোর ক্ষেত্রে ভারত সাশ্রয়ী বিকল্প প্রদান করে।

৭. মেক্সিকো: সপ্তম স্থানে থাকা মেক্সিকোতে বসবাস, খাওয়া এবং কাজ করা যে কোনো বহিরাগতের জন্য সস্তা।

৮. থাইল্যান্ড: অষ্টম স্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড। এখানকার জীবনযাত্রার ব্যয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ কম। ভারতীয় পর্যটকরাও থাইল্যান্ডকে অনেক পছন্দ করেন।

৯. ব্রাজিল: নবম সস্তা দেশ হল ব্রাজিল। জীবনধারা, সম্পত্তি এবং ডিজিটাল জীবনের দিক থেকে এটি অন্যতম সাশ্রয়ী দেশ।

১০. চীন: ২০২৪ সালের ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ৫৩টি অর্থনৈতিক দেশের মধ্যে ভারতের প্রতিবেশী দেশ চিন দশম স্থানে রয়েছে।

ভিয়েতনামের প্রসঙ্গে সমীক্ষায় আরও কিছু তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে কাজের-জীবনের ভারসাম্য (Work-Life Balance) খুব ভালো, যা কর্মজীবনের অগ্রগতিতে অবদান রাখে। দেশটিতে প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ ফুল টাইম কাজ করেন, যা বিশ্বব্যাপী গড়ে ৫৭ শতাংশের তুলনায় কম। এ প্রসঙ্গে একজন ব্রিটিশ প্রবাসী রিপোর্টে বলেছেন, “এখানকার জীবনযাত্রা আমার জন্য চাপমুক্ত। এটি আমার আগের ব্যস্ত ও কষ্টদায়ক কর্মজীবনে একটি বিস্ময়কর এবং দুর্দান্ত পরিবর্তন এনে দিয়েছে।”

এই সমীক্ষার ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, সঠিক গবেষণা এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে বিদেশে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন পূরণ করা অনেকের সাধ্যের মধ্যেই থাকতে পারে, বিশেষ করে যদি সাশ্রয়ী দেশগুলোকে গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।