দিঘার জগন্নাথ মন্দির, কলিঙ্গ স্থাপত্যের নবতম সংযোজন

দিঘা শীঘ্রই এক নতুন স্থাপত্য marvel-এর সাক্ষী হতে চলেছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি এই মন্দিরটি কলিঙ্গ স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ‘সম্পরা’ ঘরানার এই মন্দিরটি নির্মিত হচ্ছে রাজস্থানের গোলাপি বেলেপাথর দিয়ে এবং এর নির্মাণ কার্যে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ৮০০ জন শিল্পী, যাঁরা প্রত্যেকেই রাজস্থানের বাসিন্দা। উল্লেখ্য, এই শিল্পীদের অনেকেই অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রবেশদ্বারের ঠিক সামনে স্থাপন করা হয়েছে কালো পাথরের তৈরি ৩৪ ফুট দীর্ঘ অষ্টাদশ মুখী অরুণ স্তম্ভ। এই স্তম্ভের শীর্ষদেশে শোভা পাচ্ছে অরুণ মূর্তি। সিংহদ্বারের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করলেই পুরীর মন্দিরের মতোই সরাসরি জগন্নাথ দেবের মূর্তি দৃষ্টিগোচর হবে। মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বার অর্থাৎ পূর্ব দিকের সিংহদ্বারের বিপরীতে থাকছে ব্যাঘ্রদ্বার। এছাড়াও, উত্তর দিকে হস্তিদ্বার এবং দক্ষিণ দিকে অশ্বদ্বার নির্মিত হয়েছে।
মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রথমে রয়েছে ভোগ মণ্ডপ, যেখানে চারটি প্রবেশদ্বার বিদ্যমান। এরপর রয়েছে ১৬টি স্তম্ভের উপর নির্মিত নাটমন্দির। নাটমন্দিরের পরেই চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে জগমোহন এবং সবশেষে গর্ভগৃহ বা মূল মন্দির। এই গর্ভগৃহে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি স্থাপন করা হবে। ভোগ মণ্ডপ ও নাটমন্দিরের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে গরুড় স্তম্ভ। নাটমন্দিরের দেওয়ালে কালো পাথরের ছোট ছোট দশাবতারের মূর্তি খোদাই করা হয়েছে। পুরীর মন্দিরের অনুকরণে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরেও থাকছে লক্ষ্মী মন্দির এবং জগন্নাথ দেবের ভোগের জন্য পৃথক ভোগশালা।
দিঘার মন্দিরে পাথরের তৈরি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি ইতিমধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে। তবে, নিয়ম মেনে নিমকাঠের তৈরি বিগ্রহে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৩০শে এপ্রিল এই বিগ্রহগুলির প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার কথা রয়েছে।
পুরীর মন্দিরের মতোই, প্রতিদিন নিয়ম মেনে মন্দিরের চূড়ায় ধ্বজা পরিবর্তন করা হবে এবং এই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য পুরীর মন্দির থেকে দক্ষ লোক আনা হবে। মন্দির নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। অবশেষে, ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা যাওয়ার পথে দিঘা উন্নয়ন পর্ষদের অধীনে থাকা ২০ একর জমি এই মন্দির নির্মাণের জন্য নির্বাচিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী এই মন্দির তৈরির ঘোষণা করলেও কোভিড পরিস্থিতির কারণে নির্মাণ কাজ শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব ঘটে। এই মন্দিরের নির্মাণ সংক্রান্ত সমস্ত ব্যয়ভার বহন করছে রাজ্য সরকার।
এই মন্দিরটি শুধু দিঘার পর্যটন মানচিত্রে একটি নতুন আকর্ষণ যোগ করবে না, বরং কলিঙ্গ স্থাপত্যের ঐতিহ্যকে বহন করে আগামী প্রজন্মকে তার সম্পর্কে অবগত করবে। মন্দিরটি নির্মাণের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে এবং স্থানীয় মানুষের মধ্যে উৎসাহ চোখে পড়ার মতো।