অপরাধীদের “স্বাধীনতা সংগ্রামী” বলে প্রশংসা ! পহলগাঁও হামলার পরই বিতর্কিত মন্তব্য পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

কাশ্মীরের পহেলগামে নিরীহ পর্যটকদের উপর হওয়া নৃশংস জঙ্গি হামলা নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে নিন্দা চলছে, ঠিক তখনই এক অত্যন্ত বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তথা উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এই হামলার নিন্দা জানালেও, হামলাকারীদের “স্বাধীনতা সংগ্রামী” আখ্যা দিয়েছেন।

দার বলেন, “জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও জেলায় গত ২২ এপ্রিল যারা হামলা চালিয়েছে, তারা ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ হতেই পারে।” পহেলগাম হামলার প্রেক্ষিতে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কড়া কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ঘোষণা করার ঠিক একদিন পরেই দারের এমন মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং ভারতের তরফে এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো হতে পারে।

শুধু হামলাকারীদের প্রশংসা নয়, সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি এবং সম্ভাব্য ভারতীয় পদক্ষেপ নিয়েও প্ররোচনামূলক মন্তব্য করেন দার। তিনি বলেন, পাকিস্তানের ২৪ কোটি মানুষের জলের প্রয়োজন, যা ভারত আটকাতে পারবে না। চুক্তি অনুযায়ী বরাদ্দ জলে কোনও হস্তক্ষেপ বা দখলদারিকে তিনি ‘যুদ্ধের সমান’ বলে অভিহিত করেন এবং তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলে জানান। একইসঙ্গে তিনি হুমকি দেন যে, ভারত যদি পাকিস্তানকে হুমকি দেয় বা সরাসরি আক্রমণ করে, তাহলে পাকিস্তানও সমপরিমাণ জবাব দেবে, অর্থাৎ ‘যেমন কে তেমন’ পরিস্থিতি তৈরি হবে। পাকিস্তান সরকারও সিন্ধু চুক্তির জল অন্যত্র ঘুরিয়ে দেওয়ার যেকোনো পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধকালীন কাজ’ হিসেবে দেখবে বলে জানিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মহম্মদ আসিফও প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি দাবি করেন যে ভারত নাকি পাকিস্তান জুড়ে হামলার পরিকল্পনা করছে। আসিফ হুমকি দেন, যদি ভারতের দ্বারা পাকিস্তানের কোনও নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে ভারতীয় নাগরিকরাও সুরক্ষিত থাকবেন না এবং ‘টিট ফর ট্যাট’ জবাব দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ২২ এপ্রিল পহেলগামের বৈসরণ তৃণভূমিতে পর্যটকদের লক্ষ্য করে এই ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। জঙ্গিদের গুলিতে ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণ যায়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীর উপত্যকায় এটিই ছিল সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত লস্কর-ই-তইবার শাখা সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। এমন হামলার পরেও পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ মন্ত্রীদের এমন মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।