পাকিস্তানি নাগরিকদের গতিবিধিতে কড়া নজর গোয়েন্দাদের, কলকাতার বুকেই কী ষড়যন্ত্র?

কাশ্মীরের পহেলগামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জের, এবার নিশানায় কলকাতার পাকিস্তানি নাগরিকরা। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। এর অংশ হিসেবে কলকাতাতে বসবাসরত পাকিস্তানি নাগরিকদের গতিবিধির উপর বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তর।

গোয়েন্দাদের প্রাথমিক নজর রয়েছে মূলত সেইসব পাকিস্তানি নাগরিকদের উপর, যাঁরা ‘লং টার্ম ভিসা’ (এলটিভি) নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে কলকাতায় বসবাস করছেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই মুহূর্তে মহানগরীতে এলটিভি ভিসায় থাকা এমন পাকিস্তানি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ৩০ জন। এদের মধ্যে অধিকাংশই হলেন গৃহবধূ, যাঁরা ভারতীয় নাগরিকদের বিয়ে করে এ শহরে ঘর বেঁধেছেন।

সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, এলটিভি ভিসায় এদেশে আসা পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য ভিসা দেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে এক বা দু’বছরের জন্য নবীকরণ করা হয়। প্রতিটি নবীকরণের আগেই তাঁদের কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরে এসে নিজেদের উপস্থিতি রিপোর্ট করতে হয়। এই পদ্ধতিতেই গোয়েন্দারা তাঁদের সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য পান এবং ভিসা নবীকরণের জন্য তাঁদের সুপারিশ প্রয়োজন হয়, ফলে তাঁরা স্বাভাবিতাবেই নজরে থাকেন। তবে পহেলগাম হামলার প্রেক্ষাপটে গোয়েন্দারা এবার শুধু এই প্রশাসনিক নজরদারিতেই সীমাবদ্ধ থাকছেন না, তাঁরা আরও গভীর ও বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছেন।

বিশেষ করে দেখা হচ্ছে, এই পাকিস্তানি নাগরিকরা কাদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রাখছেন। গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, বিবাহিত গৃহবধূদের অনেকেই স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের বাপের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, যা অত্যন্ত স্বাভাবিক ও মানবিক একটি বিষয়। তবে গোয়েন্দারা এর বাইরেও ভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিচ্ছেন – পাকিস্তানে বসবাসরত তাঁদের আত্মীয়স্বজন ছাড়া অন্য কোনও পাকিস্তানি নাগরিকের সঙ্গে তাঁদের বা তাঁদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যোগাযোগ রয়েছে কিনা। এই যোগাযোগ কেবলমাত্র সামাজিক বা পারিবারিক সম্পর্কের সূত্রেই হচ্ছে, নাকি এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে, তা বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। এমনকি ওই পাকিস্তানি নাগরিকদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ইতিহাসও কড়া নজরে রাখা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে যারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের পরিচয়ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক ইতোপূর্বে সার্ক ভিসা বা ‘এসভিইএস’ ভিসা নিয়ে ভারতে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তবে কলকাতায় এখনও এমন সার্ক ভিসা বহনকারী কোনও পাকিস্তানি নাগরিক অবশিষ্ট আছেন কিনা, সে বিষয়ে গোয়েন্দাদের কাছে স্পষ্ট তথ্য নেই। তবে এলটিভি ভিসায় যারা রয়েছেন, তাঁদের তালিকা ও গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দারা নিশ্চিত এবং তাঁদের উপর নিরন্তর নজরদারি চলছে। গোয়েন্দা সূত্র মারফত জানা গেছে, প্রয়োজনে এই পাকিস্তানি নাগরিকদের ডেকে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। এমনকি তাঁদের প্রতিবেশী বা পরিচিত যারা তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন বা মেলামেশা করেন, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হতে পারে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, পহেলগাম হামলার প্রেক্ষাপটে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না প্রশাসন ও গোয়েন্দা বিভাগ। দেশের সুরক্ষার স্বার্থে যতটা সম্ভব, ততটা সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কলকাতায় বসবাসরত এই পাকিস্তানি নাগরিকদের উদ্দেশ্য, তাঁদের কার্যাবলী ও কাদের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন – প্রতিটি বিষয়ই এখন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দাদের কড়া নজরদারিতে রয়েছে।