পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা, লস্কর জঙ্গি আসিফ ফৌজি শনাক্ত, মহিলা পর্যটকের মোবাইলে ছবি

মঙ্গলবার দুপুরে নিরিবিলি বৈসরন উপত্যকা কেঁপে উঠেছিল জঙ্গি হানায়। একের পর এক পর্যটকের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পহেলগাঁও। যে পিকনিক স্পট এতদিন ছিল পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত, সেখানে এখন মোতায়েন রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। পাশের পাইন জঙ্গলেও চলছে কড়া নজরদারি। এরই মধ্যে পর্যটকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় তদন্তকারী সংস্থাগুলি হাতে পেয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পহেলগাঁওয়ের এই নারকীয় হামলার পেছনে ছিল লস্কর জঙ্গি আসিফ ফৌজি। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, এক মহিলা পর্যটকের মোবাইলে পাওয়া গেছে এই ফৌজির ছবি। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনার ভিত্তিতে পুলিশ ফৌজির স্কেচ তৈরি করেছিল, এবং সেই স্কেচের সঙ্গে মহিলা পর্যটকের তোলা ছবির অবিশ্বাস্য মিল পাওয়া গেছে। পুলিশ আসিফ ফৌজির ছবি প্রকাশ করার পর জানা যায়, সে খচ্চরের সহিস সেজে পর্যটকদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছিল।
গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, লস্কর জঙ্গিদের হামলার জন্য দুটি পরিকল্পনা ছিল – প্ল্যান এ এবং প্ল্যান বি। এই হামলার আগে একজন মহিলা পর্যটক, একতা তেওয়ারির সন্দেহ হয় যখন তিনি খচ্চর ভাড়া করতে যান। খচ্চর ভাড়া নিয়ে কথা বলার সময় জঙ্গির কাছে একটি ফোন আসে এবং সে মোজা থেকে ফোন বের করে কথা বলতে শুরু করে। এই অস্বাভাবিক আচরণ দেখে একতার সন্দেহ বাড়ে। এখানেই শেষ নয়, পর্যটকদের ধর্ম নিয়েও লস্কর জঙ্গি প্রশ্ন করেছিল বলে একতা তিওয়ারি জানিয়েছেন, যা অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর।
পহেলগাঁওয়ে যখন গুলি চলছিল, তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল আসিফ ফৌজি। পর্যটক একতা তেওয়ারির মোবাইলে তারই ছবি ধরা পড়ে। একতা ঘটনার দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, আসিফ নিজেকে খচ্চরের সহিস হিসেবে পরিচয় দিচ্ছিল এবং তাদের কাছে জানতে চেয়েছিল কোথা থেকে এসেছেন, কতজন আছেন সঙ্গে। একতার পদবী জানার আগ্রহও প্রকাশ করেছিল সে। এই কথোপকথনের মধ্যেই জঙ্গির কাছে ফোন আসে এবং একতা সেই ফোনের কিছু কথা শুনে ফেলেন যা ভয়াবহ।
একতা কী শুনেছিলেন? জানা গেছে, তিনি ‘প্ল্যান বি’, ‘বক্স’ ইত্যাদি শব্দগুলো শুনতে পেয়েছিলেন। এর পরেই তিনি তার স্বামীকে বলেন, যেভাবেই হোক আসিফের একটি ছবি তুলতে। এই ছবির সূত্রেই আসিফ ফৌজির নাম সামনে আসে এবং ছবিটি বর্তমানে তদন্তকারী সংস্থার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বুধবার আসিফ ফৌজি, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহারের স্কেচ প্রকাশ করা হয়, যাদের কোড নাম ছিল যথাক্রমে মুসা, ইউনুস এবং আসিফ। একতার মোবাইলে তোলা আসিফের ছবির সঙ্গে প্রকাশিত স্কেচের মিল খুঁজে পেয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুমান, এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল সইফুল্লা কাসুরি ওরফে সইফুল্লা খালিদ। অন্যদিকে, দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)-এর নেতৃত্বে ছিল আসিফ ফৌজি। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল এবং ৩৭০ ধারা রদ করার পর থেকেই উপত্যকায় জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিভিন্ন মহল অভিযোগ করে। ৩৭০ ধারা বাতিলের পরেই ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)-এর জন্ম হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারী দুই জঙ্গি পাকিস্তানি ভাষা পশতুতে কথা বলছিল। অন্য দুজন বিজভেরা ও ত্রালের স্থানীয় বাসিন্দা ছিল বলে জানা গেছে।
আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, গোয়েন্দা সূত্রে খবর মিলেছে হামলাকারীদের ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট মুজফফরাবাদ ও করাচির সেফ হাউসগুলিতে শনাক্ত করা গেছে। এর মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসী যোগসূত্র নিশ্চিত হয়েছে। সূত্রের খবর, আক্রমণকারী জঙ্গিদের মাথায় হেলমেট-মাউন্ট ক্যামেরা লাগানো ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পর্যটকদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রেকর্ড করে তাদের সহযোগী সন্ত্রাসীদের কাছে ফুটেজ পাঠানোর উদ্দেশ্যেই এই ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল।