পহেলগাঁওয়ের হামলা কাশ্মীরের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিল, প্রাক্তন মোহনবাগানি খেলোয়াড় ইসফাক আমেদ

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া নারকীয় সন্ত্রাসী হামলা গোটা ভূস্বর্গকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। এই ভয়াবহ ঘটনার পর কলকাতার জনপ্রিয় তিন প্রধান ক্লাবে খেলা কাশ্মীরের তারকা ফুটবলার ইসফাক আমেদ, যিনি বর্তমানে রিয়াল কাশ্মীরের কোচের দায়িত্বে রয়েছেন, টিভি নাইন বাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কার্যত ভেঙে পড়েন। কাজের সূত্রেই তিনি এখন কাশ্মীরে অবস্থান করছেন।

এই হামলা নিয়ে নিজের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে শ্রীনগরের বাসিন্দা ইসফাক বলেন, “আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। এটা জঘন্যতম ঘটনা, যেখানে মানবিকতার লেশমাত্র নেই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যাঁরা ঘুরতে এসেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে এমনটা ঘটেছে—এটা ভাবতেও পারছি না, আমার বলার ভাষা নেই।” তিনি আরও বলেন, “নিরীহদের প্রাণ কেড়ে নেওয়া সবচেয়ে খারাপ কাজ। ওরা হয়তো কারও বাবা-মাকে মেরেছে, কারও সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে। এই ঘটনায় আমাদের সকলের খুব কষ্ট হচ্ছে।”

ইসফাক আমেদ মনে করেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল কাশ্মীরের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া এবং পর্যটকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করা। তাঁর কথায়, “এই পরিস্থিতি থেকে কাশ্মীরকে আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন হবে। পর্যটনই কাশ্মীরের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। জেনে বুঝেই এই হামলা করা হয়েছে কাশ্মীরকে ‘অনিরাপদ’ প্রমাণ করার জন্য। এই ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার কাছে নেই। এর যত নিন্দা করি, কম হবে।” ফুটবলের উপরও এই হামলার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন। প্রবীণ এবং কিশোর দর্শকরা সাধারণত রিয়াল কাশ্মীরের খেলা দেখতে মাঠে আসেন, কিন্তু এই ঘটনার পর তারা কতটা নিরাপদে অনুভব করবে, তা নিয়ে তিনি চিন্তিত।

শ্রীনগরে থাকা ইসফাক জানান, “পুরো কাশ্মীর কাঁদছে।” তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রথমবার জম্মু ও কাশ্মীরে এমন বনধ পালিত হয়েছে। হামলার খবর পেয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে সরকার দ্রুত দোষীদের খুঁজে বের করবে এবং তাদের কঠোর শাস্তি দেবে।

উল্লেখ্য, ফুটবলার হিসেবে ইসফাক আমেদের কলকাতার সঙ্গে নিবিড় যোগ ছিল। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মোহনবাগানে, এরপর ২০১২-১৩ মরশুমে ইস্টবেঙ্গলে এবং ২০১৩-১৪ ও ২০১৭ সালে মহমেডানের হয়ে খেলেছেন। পহেলগাঁওয়ের হামলায় নিহত ২৬ জন পর্যটকের মধ্যে যে তিন বাঙালি পর্যটক ছিলেন, কলকাতায় খেলার সুবাদে তাঁদের মৃত্যুর খবরেও ইসফাকের মন ভারাক্রান্ত। এই ঘটনা তাঁর কাছে ব্যক্তিগত কষ্টের কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে।