চাকরিহারা শিক্ষকদের ক্ষোভ ও বিভেদ – যোগ্য তালিকায় নাম নেই চিন্ময়ের, ওএমআর নিয়ে প্রশ্ন অন্য সংগঠনের

রাজ্যের চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ উত্তর ২৪ পরগনার একটি স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডল। তবে সম্প্রতি স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)-এর প্রকাশিত যোগ্য শিক্ষকদের তালিকায় তাঁর নাম না থাকায় নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন চলছে। বৃহস্পতিবার চিন্ময় মণ্ডল সহ অন্যান্য চাকরিহারা শিক্ষক, যাদের নাম এই তালিকায় আসেনি, তারা এসএসসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। চেয়ারম্যান তাদের জানান যে তাদের নামের পাশে ‘নন জয়েনিং’ (Non Joining) লেখা থাকার কারণে যোগ্যদের তালিকায় তাদের নাম আসেনি।

‘নন জয়েনিং’ হিসেবে চিহ্নিত করার অর্থ হলো, সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা নিয়োগপত্র পাওয়া সত্ত্বেও সেই সময়ে স্কুলে যোগ দেননি। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে যে, পরবর্তীকালে স্কুলে যোগদান করা সত্ত্বেও কমিশন সেই তথ্য তাদের রেকর্ডে আপডেট করেনি, যার ফলস্বরূপ এই বিপত্তি ঘটেছে। এই প্রেক্ষাপটেই প্রশ্ন উঠেছে যে, যদি তারা ‘নন জয়েনিং’ই হন, তাহলে গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে কীভাবে তারা শিক্ষকতা করছেন এবং নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন?

বৃহস্পতিবার এসএসসি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে চিন্ময় মণ্ডল জানান, “অনেকের নামের পাশে ‘নন জয়েনিং’ লেখা রয়েছে, কিন্তু এই তথ্য আপডেট করা হয়নি। কমিশনের কাছে সেই সঠিক ডেটা নেই। চেয়ারম্যান বিষয়টি সমাধানের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় চেয়েছেন। আমরা জানতে পেরেছি, প্রায় ১৩০ জন শিক্ষক এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।” তিনি এবং অন্যান্য চাকরিহারা শিক্ষকরা কমিশনের কাছে অবিলম্বে একটি হেল্পলাইন নম্বর বা ইমেল আইডি চালু করার দাবি জানিয়েছেন, যাতে যোগ্য শিক্ষক সংগঠনগুলোর বাইরে থাকা অন্য শিক্ষকরাও এই ধরনের সমস্যায় পড়লে দ্রুত সমাধান পেতে পারেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এসএসসি অফিসের সামনে আরও একটি চাকরিহারা শিক্ষক সংগঠনের আন্দোলন শুরু হয়। সিবিআই তদন্তে চিহ্নিত অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়ে গঠিত এই সংগঠনটি এদিন বিক্ষোভ দেখায়। তাদের অভিযোগ, সিবিআইয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসএসসির তৈরি করা যোগ্য শিক্ষকদের তালিকাতেও গরমিল রয়েছে। সকাল থেকেই এসএসসি অফিস চত্বরে দুই পক্ষের অবস্থানের জেরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং যোগ্য-অযোগ্য ইস্যুতে পালটা স্লোগান ওঠে। ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও, তারা কোনো পক্ষকেই বাধা দেয়নি, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক সংগঠনের আহ্বায়ক চিন্ময় মণ্ডল। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “এখানে যদি কোনও রকম অশান্তি হয়, তবে তার দায় কে নেবে? পুলিশের বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।”

আন্দোলনরত অন্য সংগঠনের এক প্রার্থী বিপ্লব বিবর, যিনি সিবিআই তদন্তে অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, বলেন, সিবিআই প্রাক্তন কর্মী পঙ্কজ বনসালের কাছ থেকে যে হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করেছে, তার সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। সিবিআই নিজেই ওই হার্ড ডিস্ক ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য হায়দরাবাদ পাঠিয়েছিল, কিন্তু সেটির চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও আসেনি।

রীতেশ ঘোষ নামে আরেক চাকরিহারা প্রার্থী ওএমআর (OMR) শিট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, তাদের ওএমআর ‘মিস ম্যাচ’ (Mismatch) বলা হচ্ছে, অথচ এসএসসির কাছে তাদের আসল ওএমআর শিট নেই। তাহলে পঙ্কজ বনসালের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ওএমআর শিটকে কিসের সঙ্গে মিলিয়ে ‘মিস ম্যাচ’ বলা হলো এবং তাদের অযোগ্য ঘোষণা করা হলো, তা স্পষ্ট নয়। তিনি আরও বলেন, যদি তাদের অযোগ্য হিসেবেই বিবেচনা করা হয়, তবে কমিশন তাদের ‘অযোগ্য সার্টিফিকেট’ প্রদান করুক।