আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতা নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী, দল গুছিয়ে খেলার পরামর্শ

ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) চলতি মরশুমে যেখানে মোহনবাগান এসজি ধারাবাহিক সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে লিগ শিল্ড এবং আইএসএল কাপ দুটোই ঘরে তুলেছে, সেখানে আইএসএলের শুরু থেকেই ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স ছিল অত্যন্ত disappointing। এমনকি প্রথমবার লিগে অংশ নেওয়া মহমেডান স্পোর্টিংও প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কলকাতার রবীন্দ্র সদনে ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত তথ্যচিত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মঞ্চ থেকেই তিনি লাল-হলুদ ব্রিগেডের ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ বাতলে দেন। ক্লাব এবং লগ্নিকারী সংস্থা ইমামির মধ্যে যে বোঝাপড়া ও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে, সেদিকে ইঙ্গিত করে মুখ্যমন্ত্রী ক্লাব কর্তাদের নির্দেশ দেন ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করার।

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই ক্লাবগুলির ‘মেমোরি লেন’ অর্থাৎ ইতিহাসকে সংরক্ষণ করার উপর জোর দেন, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তা থেকে অনুপ্রাণিত হতে পারে। তিনি বলেন যে বাংলার তিনটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব – মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান – বর্তমানে আইএসএলে খেলছে। মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য তিনি অভিনন্দন জানান। ইস্টবেঙ্গলের যখন কঠিন সময় চলছিল, তখন ইমামি কীভাবে এগিয়ে এসেছিল, সেকথাও তিনি উল্লেখ করেন। মোহনবাগানের কোনও অভাব নেই, কারণ তাদের পাশে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার মতো শিল্পপতি রয়েছেন, সেকথাও মুখ্যমন্ত্রী বলেন। মহমেডানও আইএসএলে নিজেদের মতো করে খেলছে বলে জানান তিনি।

এরপরই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি মোহনবাগানের সাফল্য এবং ইস্টবেঙ্গলের ক্রমাগত ব্যর্থতা প্রসঙ্গে আসেন। ইস্টবেঙ্গলের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমি আগেও অনেকবার বলেছি, জয়-পরাজয় পরের বিষয়, কিন্তু সবার আগে দরকার একটা ভালো দল তৈরি করা। আমার অভিযোগ হলো, আপনারা দল গঠনে গাফিলতি করছেন, ভালো ফুটবলার নিচ্ছেন না। ইস্টবেঙ্গল কর্তাদেরও কিছু ভুল আছে। আপনারা যদি লগ্নিকারী সংস্থাকে সঠিকভাবে না জানান, তাহলে তারা কীভাবে বুঝবে কী প্রয়োজন?” তিনি একটি চারা গাছকে প্রাথমিক অবস্থায় ঘিরে রাখার উপমা দিয়ে ক্লাবকে যত্ন করার কথা বলেন।

ক্রীড়া পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্য সরকারের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজ্যের পক্ষ থেকে ক্লাবগুলিকে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী থাকাকালীন সময় থেকেই তিনি সারা দেশে একাডেমি তৈরির উপর জোর দিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন। এই সূত্রেই তিনি বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (CAB) সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে ডুমুরজলায় একটি ক্রিকেট একাডেমি তৈরির পরামর্শ দেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে এবং তিনি স্নেহাশিসকে বলেছেন ডুমুরজলায় একাডেমি গড়তে। যদিও সেখানে স্টেডিয়াম নির্মাণ নিয়ে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে, তাই তিনি পরামর্শ দেন সেইসব জটিলতায় না জড়িয়ে একাডেমি তৈরির কাজে এগিয়ে যেতে। এছাড়াও, রাজারহাটে একটি ফুটবল স্টেডিয়াম হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট জমি থাকলেও তিন বছর ধরে সেখানে কোনো কাজ হয়নি। তাই ফুটবল স্টেডিয়াম না হলে সেখানে ক্রিকেট একাডেমি করার বিকল্প প্রস্তাবও দেন মুখ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ইস্টবেঙ্গলের মহিলা ফুটবল দলের হাতে ট্রফি তুলে দিয়ে তাদের সাফল্যে অভিনন্দন জানান। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ৫০ লক্ষ টাকার আর্থিক পুরস্কারও দেওয়া হয়। এদিন ছিল ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। এই তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। বাংলা সিনেমার জগতে বর্ষীয়ান এই পরিচালক তাঁর কাজের জন্য ১৬টি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তথ্যচিত্র নির্মাণ প্রসঙ্গে গৌতম ঘোষ জানান যে এটি তৈরি করতে গিয়ে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশেষ করে পুরনো খেলার ফুটেজ সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। সংগৃহীত বাকি তথ্য ক্লাবের হার্ড ডিস্কে জমা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ইস্টবেঙ্গলের গৌরবময় এবং ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।