“স্বামীর লাশের পাশে বসে নববধূ”-বিয়ের পর হানিমুনে গিয়ে সব শেষ,ভাইরাল মর্মান্তিক ছবি

জম্মু-কাশ্মীরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য এবং ভালোবাসার নতুন শুরু—এই দুইয়ের সাক্ষী হতে পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় হানিমুনে গিয়েছিলেন ভারতীয় নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল এবং তাঁর সদ্য বিবাহিত স্ত্রী। কিন্তু যেই উপত্যকা ভালোবাসার গন্তব্য হিসেবে পরিচিত, সেই পহেলগাঁওই তাঁদের জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠল। ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় সেখানেই প্রাণ হারালেন তরুণ নৌবাহিনীর এই কর্মকর্তা।

মাত্র এক সপ্তাহ আগেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন বিনয়। রিসেপশনের পরপরই স্বপ্নের হানিমুন কাটাতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই হানিমুন অসময়ে থেমে গেল সন্ত্রাসীদের নির্মম হামলায়।

হামলার পর প্রকাশ্যে আসা একটি হৃদয়বিদারক ছবিতে দেখা যায়—রক্তস্নাত বৈসরন উপত্যকার মাঝে মৃত স্বামীর পাশেই স্তব্ধ হয়ে বসে রয়েছেন বিনয়ের নববধূ। তাঁর চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়, আর যেন নির্বাক প্রশ্ন—”আমার অপরাধ কী ছিল?”

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামলার সময় সন্ত্রাসীরা পুলিশের পোশাক পরে এসেছিল। ফলে পর্যটকদের অনেকেই প্রথমে তাদের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারেননি বা সন্দেহ করেননি। এই সুযোগ নিয়ে জঙ্গিরা আচমকাই হিন্দু পরিচয়ের পর্যটকদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। এই হামলায় অন্তত ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে এবং এক ডজনের বেশি মানুষ গুরুতর জখম হয়েছেন।

নিহত নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল হরিয়ানার কারনালের বাসিন্দা ছিলেন। সম্প্রতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর অকাল প্রয়াণে পরিবারে এখন শুধুই কান্না, গভীর শোক আর একরাশ স্তব্ধতা। ছেলের মৃতদেহ আনতে বিনয়ের বাবা পহেলগাঁও গিয়েছেন। কারণালের গ্রামজুড়েও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশীরা বলছেন—এভাবে একজন সৎ দেশপ্রেমিক এবং সদ্য বিবাহিত তরুণকে হারানোর ব্যথা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব।

নিরাপত্তা বাহিনীর প্রাথমিক বিশ্লেষণ, ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে পরিবারসহ হিন্দু পর্যটকদের লক্ষ্যবস্তু করেছিল। এই বর্বর হামলার পর দেশজুড়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ দানা বাঁধছে। গ্রামবাসীরা সহ সাধারণ মানুষ জোর দাবি তুলেছেন, এই হামলার নেপথ্যে থাকা সন্ত্রাসীদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। তাঁদের মতে, বারবার সন্ত্রাসীদের ক্ষমা করলে বা নরম মনোভাব দেখালে এমন হামলা ভবিষ্যতে ফের ঘটবে।

বিনয়ের স্ত্রী সেই মুহূর্তে পাশে বসে ছিলেন, জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে তিনি এখন একা দাঁড়িয়ে। তাঁর দৃষ্টি, তাঁর নির্বাকতা—সব মিলিয়ে যেন গোটা জাতির কাছে এক নীরব আহ্বান: আর যেন এমন অকাল মৃত্যু না ঘটে, আর যেন কোনো ভালোবাসার নতুন গল্প এভাবেই রক্তে ভেসে গিয়ে অসময়ে থেমে না যায়।