বিশেষ: ভারতের ১০টি রাজ্য শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে, দেখেনিন তালিকায় বাংলার অবস্থান কত?

ভারত ক্রমশ উন্নতির পথে অগ্রসর হচ্ছে এবং এর সাক্ষরতার হারেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। শিক্ষিত যুবক-যুবতীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, এবং সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে সম্পূর্ণ সাক্ষর করে তোলা। তবে, এই সাফল্যের মধ্যেও দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সাক্ষরতার হারে এখনও স্পষ্ট বৈষম্য বিদ্যমান।
এই প্রতিবেদনে ভারতের দশটি স্বল্প শিক্ষিত রাজ্য, সাক্ষরতার হার কম থাকার কারণ এবং সাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হলো:
স্বল্প শিক্ষিত রাজ্যের তালিকা (২০২১ সালের সাক্ষরতার হার অনুসারে):
রাজ্য | সাক্ষরতার হার |
---|---|
বিহার | 61.80% |
অরুণাচল প্রদেশ | 65.38% |
রাজস্থান | 66.11% |
ঝাড়খণ্ড | 66.41% |
অন্ধ্রপ্রদেশ | 67.02% |
জম্মু ও কাশ্মীর | 67.16% |
উত্তরপ্রদেশ | 67.68% |
মধ্যপ্রদেশ | 69.32% |
ছত্তিশগড় | 70.28% |
অসম | 72.19% |
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- কেরল ৯৪.০০% সাক্ষরতার হার নিয়ে ভারতের সবচেয়ে শিক্ষিত রাজ্য।
- পশ্চিমবঙ্গ ৭৬.২৬% সাক্ষরতার হার নিয়ে ১৯তম স্থানে রয়েছে।
- ২০১১ সালের জনগণনার তুলনায়, প্রতিটি রাজ্যেই সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের (এনএসও) ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী ভারতের গড় সাক্ষরতার হার ৭৭.৭০%। এই হিসেবেও উপরের রাজ্যগুলি জাতীয় গড়ের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।
সাক্ষরতার হার কম থাকার কারণ:
- দারিদ্র্য: অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের শিক্ষার খরচ বহন করতে অক্ষম, যার ফলে শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না বা অল্প বয়সেই পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
- লিঙ্গ বৈষম্য: কিছু অঞ্চলে কন্যা শিশুদের শিক্ষার প্রতি তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না এবং তাদের গৃহস্থালীর কাজে নিযুক্ত করা হয়।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব: বিশেষত গ্রামীণ এবং দুর্গম অঞ্চলে পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে।
- শিক্ষকদের অভাব: অনেক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব দেখা যায়, যা শিক্ষার গুণমানকে প্রভাবিত করে।
- শিশুদের মধ্যে স্কুলে যাওয়ার হার কম: বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কারণে অনেক শিশুই নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায় না।
- সচেতনতার অভাব: শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে।
সাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের উদ্যোগ:
- সর্বশিক্ষা অভিযান (SSA): এই প্রকল্পের লক্ষ্য ৬-১৪ বছর বয়সী সকল শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা সার্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করা।
- মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান (MSE): এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নত করা এবং সকলের জন্য সহজলভ্য করার চেষ্টা চলছে।
- কন্যা শিক্ষা প্রচার: মেয়েদের শিক্ষায় উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
- শিক্ষক প্রশিক্ষণ: শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে।
- সচেতনতা বৃদ্ধি: শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন প্রচার চালানো হচ্ছে। এছাড়াও, ‘নব ভারত সাক্ষরতা কার্যক্রম’ (New India Literacy Programme) ২০২২-২০২৭ পর্যন্ত বাস্তবায়িত করার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, যার লক্ষ্য ১৫ বছর ও তার বেশি বয়সের ৫ কোটি নিরক্ষর মানুষকে সাক্ষর করে তোলা।
সরকারের এই নিরলস প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে এবং দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে শিক্ষা পৌঁছে দিতে আরও দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবে। সমাজের সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসই ভারতকে সম্পূর্ণ সাক্ষরতার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে।