ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কা, একদিনেই বিশ্ব ধনকুবেরদের ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের ক্ষতি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত বুধবার (২ এপ্রিল) হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সকল দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।

সর্বশেষ এই শুল্কারোপের জেরে বিশ্বের ৫০০ শীর্ষ ধনী ব্যক্তি একদিনেই প্রায় ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (২০৮ বিলিয়ন ডলার) সম্পদ হারিয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারির পর এই প্রথমবার এমন বিপুল পরিমাণ সম্পদহানির ঘটনা ঘটল। বিশ্বের ধনকুবের ব্যবসায়ীদের অর্ধেকেরও বেশি তাদের সম্পত্তির মূল্য হ্রাস হতে দেখেছেন।

বিশ্বের প্রধান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারেও এর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। মেটার শেয়ারদর ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ, অ্যামাজনের ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ, গুগলের ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং অ্যাপলের শেয়ারদর ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গ এক হাজার ৭৯ কোটি ডলার (১০.৭৯ বিলিয়ন ডলার) হারিয়েছেন। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের সম্পদ কমেছে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার (১৬ বিলিয়ন ডলার)। টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের সম্পদ কমেছে ১১ হাজার কোটি ডলারের বেশি (১১০ বিলিয়ন ডলার)।

ট্রাম্পের শুরু করা বাণিজ্যযুদ্ধের সবচেয়ে বড় আঘাতটি সম্ভবত পেতে যাচ্ছে প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি শুল্ক আরোপের কারণে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে চীনের সম্ভাব্য পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় অ্যাপলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজারটিতে পণ্য বিক্রিতে ধস নামতে পারে। অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুকের জন্য এটি এক কঠিন ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

গত ২ এপ্রিল ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরদিনই শেয়ারবাজারে অ্যাপলের বাজার মূলধন ৩১১ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। এর পর, ৪ এপ্রিল চীন যদি মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে এবং দুর্লভ খনিজ পদার্থ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তাহলে অ্যাপলের শেয়ারের দর আরও পড়তে পারে। হার্ডওয়্যারের ওপর अत्यधिक নির্ভরতা থাকায় অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানির তুলনায় অ্যাপলের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে।

একসময় অ্যাপলকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ হিসেবে গণ্য করা হতো। অনেকেই আশা করেছিলেন যে এই প্রযুক্তি জায়ান্ট হয়তো দুই পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

বর্তমানে ট্রাম্প চীনের ওপর ৫৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যেখানে অ্যাপলের প্রায় ৯০ শতাংশ আইফোন উৎপাদিত হয়। এই শুল্ক আগের আরোপিত শুল্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এছাড়াও, ভারতে ২৬ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে—যেখানে অ্যাপল তাদের বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিল। এখন সেই পরিকল্পনাও অনিশ্চয়তার মুখে। ট্রাম্পের এই নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।