ট্যাটু মুছে ফেলার ধুম, ক্লিনিকগুলিতে লম্বা লাইন তরুণদের, উলটো পথে হাটছে কাশ্মীর!

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ট্যাটু নিয়ে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে পছন্দের মানুষের বা বস্তু বা এক বিশেষ চিহ্নের ট্যাটু আঁকানোর চল এখন সাধারণ হয়ে উঠেছে। তবে এই ট্রেন্ডের উলটো ছবি দেখা যাচ্ছে কাশ্মীরে। যেখানে এখনকার তরুণরা শরীর থেকে ট্যাটু মুছে ফেলার জন্য ট্যাটু ক্লিনিকে দীর্ঘ লাইন তৈরী করছেন। বিশেষ করে একে ৪৭ রাইফেলের ট্যাটু মুছে ফেলার প্রবণতা বেড়েছে।
শ্রীনগরের ট্যাটু ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন শত শত তরুণ-তরুণী তাদের শরীর থেকে উল্কি মুছে ফেলতে আসছেন। ট্যাটু শিল্পীরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ তরুণরা রাইফেলের ট্যাটু নিয়ে ভয় পান অথবা ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান জানাতে চায়। বিশেষভাবে কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে, অস্ত্রের ট্যাটু থাকার পরিণতি হিসেবে অনেক তরুণদের নিরাপত্তা বাহিনীর নজরে পড়তে হয়। তাই তারা এখন নিজেদের শরীর থেকে এসব ট্যাটু মুছে ফেলছেন।
ট্যাটু শিল্পীদের মতে, কাশ্মীর উপত্যকায় ট্যাটু মুছে ফেলা এখন একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন শিল্পী জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে তিনি ১ লাখেরও বেশি ট্যাটু মুছে ফেলেছেন। এমনকি এখনও প্রতিদিন প্রচুর তরুণ-তরুণী তার কাছে ট্যাটু মুছে ফেলার জন্য আসছেন। তিনি বলেন, “এটা এখন একটা আন্দোলন হয়ে গেছে। অনেকেই মনে করেন, ট্যাটু করার জন্য তারা অনুতপ্ত। তারা বিশ্বাস করেন, ট্যাটু না করালেই ভালো হতো।”
এছাড়া, ধর্মীয় অনুভূতির কারণে অনেক তরুণই তাদের শরীর থেকে ট্যাটু মুছে ফেলছেন। এক ট্যাটু শিল্পী বলেন, “ইসলাম ধর্মে ট্যাটু করা নিষিদ্ধ। যদি আমরা শরীরে ট্যাটু করি, তাহলে আমাদের ধর্মে তা অনুমোদিত নয়।” এমন অনুভূতি থেকেই অনেক তরুণ তাদের ট্যাটু মুছে ফেলছেন।
কাশ্মীরের ইসলামিক পণ্ডিতরা এবং ইমামরা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে ইসলামে ট্যাটু করা নিষিদ্ধ। তারা মসজিদে প্রচার করছেন যে, শরীরে ট্যাটু থাকলে নামাজ পড়া যাবে না এবং মুসলমানদের এই ধরনের বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে।
এছাড়া, ট্যাটু করানোর জন্য আরও একটি কারণ হলো স্বাস্থ্য সমস্যা। ট্যাটু করার পর অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, এমন ধারণাও অনেক তরুণের মধ্যে রয়েছে।
কাশ্মীরে ট্যাটু মুছে ফেলার এই প্রবণতা নতুন একটি সামাজিক পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠেছে, যেখানে ধর্মীয়, সামাজিক এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে তরুণরা এখন তাদের শরীর থেকে এসব চিহ্ন মুছে ফেলতে আগ্রহী।