“শেষ পর্যন্ত জলেই গেল সিবিআই-নথি”-কোচবিহারে পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ কোর্টের

পিসি সরকার ছাড়াই যেন ম্যাজিক ঘটে গেল কোচবিহারের দিনহাটায়! একটি সিল করা স্টিলের ট্রাঙ্কের মধ্যে রাখা কুড়ুল, দা, কাঁচি ও লোহার রডের মতো অস্ত্র জলে ডুবে জং ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই হতবাক হয়ে গেছেন সিবিআই তদন্তকারীরা এবং আদালত। ২০২১ সালের ভোট পরবর্তী হিংসায় বিজেপি কর্মী বিশ্বজিৎ রায়ের খুনের মামলায় ব্যবহৃত এই অস্ত্রগুলো ছিল গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।

ঘটনার পটভূমি

২০২১ সালের ৪ মে দিনহাটার ব্যাটলা এলাকায় খুন হন বিশ্বজিৎ রায় ওরফে হারাধন। এই ঘটনায় জেলায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার নেয় সিবিআই। তদন্তকারীরা অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করে একটি স্টিলের ট্রাঙ্কে সিল করে রাখে। সাক্ষীদের সইসহ সমস্ত নথি সংগ্রহের পর ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চার্জশিট আদালতে জমা দেয় সিবিআই। আটজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে সাতজন এখনও জেল হেফাজতে রয়েছেন।

আদালতে চমক

বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন সম্প্রতি ট্রাঙ্কটি মালখানা থেকে দিনহাটা আদালতে আনা হয়। তালা খুলতেই দেখা যায়, ভেতরে জল ঢুকে অস্ত্রগুলো জং ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। এই অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হারিয়ে যাওয়ায় সকলের চোখ কপালে উঠে যায়। সিবিআইয়ের আইনজীবী কৌশিক ভদ্র বলেন, “আদালতের তত্ত্বাবধানে থাকা এই ট্রাঙ্কে জল কীভাবে ঢুকল, কে দায়ী—এটি সন্দেহজনক। সমস্ত প্রমাণ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এর তদন্তের জন্য পিটিশন দিয়েছিলাম। বুধবার দিনহাটা অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশন জজ জেলা পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।”

গাফিলতির অভিযোগ

সিবিআইয়ের দাবি, ট্রাঙ্কটি আদালতের মালখানায় না রেখে দিনহাটার ট্রেজারি বিল্ডিংয়ে রাখা হয়েছিল। সেখানে জল ঢুকে প্রমাণ নষ্ট হওয়াটা চরম গাফিলতির পরিচয়। তদন্তকারী সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, “এই প্রমাণ নষ্ট হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে। অভিযুক্তরা এই সুযোগ নিতে পারে। তদন্তে এর সত্যতা উদঘাটন জরুরি।”

আদালতের পদক্ষেপ

মঙ্গলবার বিচারক এই ঘটনায় পিটিশন গ্রহণ করেন। বুধবার তিনি জেলা পুলিশ সুপারকে বিষয়টির তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালতের প্রশ্ন, কীভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ এভাবে নষ্ট হল? এই ঘটনা নিয়ে জেলায় রাজনৈতিক মহলেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

জনমনে প্রশ্ন

২০২১ সালের খুনের ঘটনায় এই অস্ত্র ছিল মূল প্রমাণ। তবে, তদন্তের এত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ কীভাবে এমন অবহেলায় নষ্ট হল, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। কেউ কেউ এর পেছনে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন। তদন্তের ফলাফলের উপর এখন সকলের নজর।

এই ‘ম্যাজিক’ ঘটনা কোচবিহারে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জেলা পুলিশ সুপারের তদন্তে কী সত্য বেরিয়ে আসে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে গোটা এলাকা।