রাইস মিলে পাওয়া গেলো চোলাই তৈরির কাঁচামাল? আবগারি দফতরের অভিযানে পর্দাফাঁস

বর্ধমানের আলমগঞ্জের মাটিরবাগ এলাকায় অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত রাইস মিলে চোলাই তৈরির উপকরণের ব্যবসা চলছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শনিবার রাতে আবগারি দপ্তর এবং বর্ধমান থানার পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। অভিযানে ওই রাইস মিল থেকে প্রচুর পরিমাণে চোলাই তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার হয়েছে। এছাড়াও, ঝাড়খণ্ডের একটি ট্রাকও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত সামগ্রী পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে।

অভিযানে কী পাওয়া গেল?

বর্ধমান থানার অন্তর্গত মাটিরবাগ এলাকার নিত্যকালী রাইস মিল বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এই মিলে দীর্ঘদিন ধরে কোনও উৎপাদন কার্যক্রম চলছে না। গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে আবগারি দপ্তর ও পুলিশ শনিবার রাতে হানা দেয়। অভিযানে মিলের গুদাম থেকে ৫৬০০ টিন উদ্ধার হয়, যেগুলিতে চোলাই তৈরির কাঁচামাল রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এছাড়াও, ঝাড়খণ্ড নম্বরের একটি ট্রাক থেকে ৪৯৫টি টিন বোঝাই অবস্থায় পাওয়া যায়। আবগারি দপ্তর জানিয়েছে, এই ট্রাকটি হরিয়ানার যমুনানগর থেকে চালান নিয়ে এসেছিল।

আবগারি দপ্তরের বক্তব্য

জেলা আবগারি দপ্তরের ডেপুটি এক্সসাইজ কালেক্টর (সদর রেঞ্জ) নিমাই সামন্ত বলেন, “গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আমরা আলমগঞ্জের মাটিরবাগ এলাকার নিত্যকালী রাইস মিলে অভিযান চালাই। সেখানে একটি ১৬ টন ধারণক্ষমতার লরি দেখতে পাই, যেখান থেকে টিন নামানো হচ্ছিল। কাগজপত্র দেখতে চাওয়ার পর আমরা উদ্ধারকৃত টিনে চোলাই তৈরির উপকরণ থাকার সন্দেহ করছি। ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া সামগ্রী পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত চলছে।” তিনি আরও জানান, এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, কারণ পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পরিত্যক্ত মিলের আড়ালে অবৈধ কারবার?

নিত্যকালী রাইস মিল বহুদিন ধরে বন্ধ থাকায় এটি এখন ভগ্নপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই পরিত্যক্ত অবস্থার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কারবার চলছিল। আবগারি দপ্তরের এই অভিযানে সেই সন্দেহের সত্যতা মিলেছে। উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল ও ভিনরাজ্যের ট্রাক থেকে স্পষ্ট, এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ হতে পারে।

তদন্তে কী উঠে আসবে?

আবগারি দপ্তর ও পুলিশ এখন এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে। উদ্ধার হওয়া সামগ্রী পরীক্ষার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে যে এগুলো সত্যিই চোলাই তৈরির কাঁচামাল কি না। তদন্তে এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পরিচয়ও উঠে আসতে পারে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই এলাকায় এমন অভিযান বিরল, তবে এটি অবৈধ কারবারের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পরিত্যক্ত নিত্যকালী রাইস মিলে চোলাই তৈরির কাঁচামাল উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আবগারি দপ্তরের এই অভিযান অবৈধ মদের ব্যবসার জাল ছিন্ন করতে কতটা সফল হবে, তা এখন পরীক্ষার রিপোর্ট ও তদন্তের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে। এই ঘটনা এলাকায় অবৈধ কারবারের বিস্তার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।