OMG! ঘরে ঝুলছে মায়ের ঝুলন্ত মৃতদেহ, পাশে বসে ভিডিও গেম খেলছে ছেলে

মায়ের গলায় ফাঁস দেওয়া মৃতদেহ ঝুলছে, আর তার পাশে বসে সাত বছরের এক শিশু দিব্যি মোবাইল গেমে মগ্ন। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে গেছেন প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন। ঘটনাটি আরও মর্মান্তিক হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, শিশুটি নিজেই সকালে মায়ের মৃত্যুর খবর বেঙ্গালুরুতে থাকা বাবাকে ভিডিও কলের মাধ্যমে জানিয়েছিল। মায়ের ঝুলন্ত দেহ দেখিয়ে বাবাকে ফোন করার পরও সে আবার গেমে মন দিয়েছে, বুঝতেই পারেনি তার জীবনে কত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। এই ঘটনা ঘটেছে আলিপুরদুয়ার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজপাড়া এলাকায়।

ঘটনার বিবরণ

শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে ডাকতে গিয়ে কোনও সাড়া না পেয়ে প্রথম শ্রেণির এই পড়ুয়া বাবাকে ফোন করে। ভিডিও কলে মায়ের ঝুলন্ত দেহ দেখার পর বেঙ্গালুরুতে কর্মরত তার বাবা পিন্টু রায় তৎক্ষণে আত্মীয়দের খবর দেন। আত্মীয়স্বজন ওই বাড়িতে পৌঁছে দেখেন, মৃত মায়ের পাশে বসে শিশুটি মোবাইলে গেম খেলছে। এই দৃশ্যে সকলেই স্তম্ভিত হয়ে যান।

মৃতার নাম প্রিয়া দাস (২৬)। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রিয়া তার ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। কয়েক মাস আগে তিনি স্বামীর সঙ্গে বেঙ্গালুরু থেকে আলিপুরদুয়ারে ফিরে এসে কলেজপাড়ায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। সম্প্রতি তারা আরেকটি নতুন ভাড়া বাড়িতে উঠে আসেন। জানা গেছে, স্বামী বেঙ্গালুরুতে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন বলে বাড়িতে না থাকায় বাড়ির মালিক তাদের বাড়ি ছাড়তে বলেছিলেন।

স্বামীর প্রতিক্রিয়া ও পুলিশের তৎপরতা

স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে পিন্টু রায় শুক্রবার রাতেই আলিপুরদুয়ারের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ময়নাতদন্তের পর শুক্রবার বিকেলে প্রিয়ার মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। দাম্পত্য কলহ না অন্য কোনও কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, তা জানতে পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। আলিপুরদুয়ার থানার আইসি অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলেন, “মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে।”

প্রতিবেশীদের হতবাক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনায় প্রতিবেশীরা গভীর শোক ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। একজন প্রতিবেশী বলেন, “ছোট্ট ছেলেটা এত বড় ঘটনার পরও গেম খেলছে দেখে মনটা ভেঙে গেছে। ও বোঝেইনি কী হয়েছে।” আরেকজন বলেন, “প্রিয়া খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। কী কারণে এমনটা করল, বোঝা যাচ্ছে না।”

এই মর্মান্তিক ঘটনা শিশুটির জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতি এনে দিয়েছে। মায়ের মৃতদেহের পাশে তার নিষ্পাপ গেম খেলার দৃশ্য সকলের মনে গভীর দাগ কেটেছে। পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে এই মৃত্যুর পেছনের সঠিক কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করছে। তবে, এই ঘটনা সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য ও পারিবারিক সমস্যার প্রতি আরও সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।