মোদী-ইউনূস সাক্ষাৎ কবে? বাংলাদেশের অনুরোধের যা বললেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর

শনিবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, আসন্ন বিমসটেক (বঙ্গোপসাগরীয় উদ্যোগের বহুমুখী প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা) শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে বৈঠকের জন্য প্রতিবেশী দেশটির অনুরোধ বিবেচনাধীন রয়েছে। এই বৈঠকটি ২ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সময় হতে পারে, যদিও এ বিষয়ে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।

চলতি বছর বিদেশ বিষয়ক সংসদীয় পরামর্শদাতা কমিটির প্রথম বৈঠকে অনেক সংসদ সদস্য বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা ভারত সরকার এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা জানতে চান। জয়শঙ্কর কমিটির সদস্যদের আশ্বস্ত করে বলেন, ঢাকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দাবি করেছে যে হিন্দুদের উপর হওয়া আক্রমণগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এগুলো সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে করা হয়নি। তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।

হিন্দুদের উপর আক্রমণ: রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

সূত্রের খবর, জয়শঙ্কর বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছে এবং এর পেছনে সংখ্যালঘু বিরোধী মনোভাব নেই। তিনি বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মায়ানমার এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সদস্যদের অবহিত করেন। তবে, পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা তিনি পরবর্তী বৈঠকের জন্য স্থগিত রাখেন।

পাকিস্তানের কারণে সার্ক নিষ্ক্রিয়, বিমসটেকে জোর

বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানান, পাকিস্তানের অসহযোগী মনোভাবের কারণে সার্ক (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংগঠন) বর্তমানে নিষ্ক্রিয় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত বিমসটেককে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। তিনি ইঙ্গিত দেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসন্ন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে পারেন। এছাড়াও, আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রীর শ্রীলঙ্কা সফরের পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে।

ইউনূসের চিন সফর ও কূটনৈতিক তৎপরতা

এদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস ২৮ মার্চ চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন এর আগে জানিয়েছিলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে ঢাকা কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে। বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এই লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হতে পারে।

গত ফেব্রুয়ারিতে ওমানে অনুষ্ঠিত ভারত মহাসাগর সম্মেলনে জয়শঙ্কর বাংলাদেশের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং বিমসটেক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উভয় পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে।

বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা এবং দুই দেশের সম্পর্কের বর্তমান গতিপ্রকৃতি নিয়ে ভারতের সংসদীয় কমিটিতে উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে। বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে মোদী-ইউনূস বৈঠক যদি অনুষ্ঠিত হয়, তবে এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে, এই বৈঠকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নিশ্চিত হয়নি।