প্রেমিকের মৃত মা সেজে খুলেছিলেন ফেক আইডি, স্বামীর দেহ ড্রামে ভরার পিছনে চাঞ্চল্যকর রহস্য

স্বামীকে হত্যা করে তার দেহ ড্রামে ভরে সিমেন্ট দিয়ে চাপা দেওয়ার ঘটনায় শিউরে উঠেছে মিরাট। এই নৃশংস ঘটনার নায়িকা মুসকান এবং তার প্রেমিক সাহিল শুক্লা। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়। তদন্তে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য – মুসকান তার প্রেমিকের কুসংস্কারের সুযোগ নিয়ে তাকে ব্রেনওয়াশ করেছিল। সাহিলের মৃত মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে ফেক আইডি থেকে মেসেজ পাঠাতো সে, এবং সেই মেসেজের মাধ্যমেই স্বামী সৌরভকে হত্যার নির্দেশ দেয়।

পুলিশ মুসকান এবং সাহিলকে গ্রেফতার করেছে। তদন্তকারীদের মতে, মুসকান কয়েক মাস ধরে সৌরভকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল। ধাপে ধাপে প্রেমিক সাহিলের মনকে এমনভাবে গড়ে তুলেছিল যে, সে নিজেই সৌরভকে খুন করতে রাজি হয়ে যায়। এর আগে দু’বার পরিকল্পনা এগিয়েও পিছিয়ে এসেছিল তারা। অবশেষে গত ৪ মার্চ পরিকল্পনা মাফিক সৌরভকে হত্যা করে এই দম্পতি।

কুসংস্কারের অন্ধকারে ডুবে ছিল সাহিল
তদন্তে আরও একটি বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। সাহিলের ‘কালা জাদু’র প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। কুসংস্কারের চরম অন্ধকারে ডুবে থাকা এই যুবকের দুর্বলতা সম্পর্কে মুসকান ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল ছিল। সাহিলের মা বহু বছর আগেই মারা গেলেও, সে বিশ্বাস করত যে তার মায়ের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়। আর এই ভ্রমের পিছনে ছিল মুসকানের হাত।

ফেক আইডি থেকে মেসেজের জাল
পুলিশ জানিয়েছে, মুসকান তার ভাইয়ের মোবাইল ব্যবহার করে তিনটি ভুয়ো স্ন্যাপচ্যাট আইডি তৈরি করেছিল। এর মধ্যে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সে নিয়মিত সাহিলের সঙ্গে চ্যাট করত, নিজেকে সাহিলের মা বলে পরিচয় দিয়ে। এই চ্যাটে সে নিজের প্রশংসা করত এবং লিখত, “মুসকান ভালো মেয়ে। তুমি ওর সঙ্গে ভালো থাকবে।” এভাবে সাহিলের কুসংস্কারে ভরা মনে ভুল ধারণা ঢুকিয়ে তাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে মুসকান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকেই সৌরভকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করেছিল মুসকান। ফেক আইডি থেকে পাঠানো মেসেজের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সাহিলের ব্রেনওয়াশ করে এবং অবশেষে ‘মৃত মা’র নির্দেশে সৌরভকে হত্যার জন্য প্রস্তুত করে তুলেছিল।

তদন্তকারীরা স্তম্ভিত
চ্যাট, ফোনের ডেটা এবং গোটা ঘটনার বিবরণে তদন্তকারীরা কার্যত হতবাক। সাহিলের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ আরও অবাক হয়। দেয়ালে দেবদেবীর ছবির পাশাপাশি লাল ও কালো রঙে আঁকা রহস্যময় তান্ত্রিক প্রতীক এবং ইংরেজিতে লেখা ভয়ঙ্কর কথাগুলো দেখে তারা স্পষ্ট বুঝতে পারে যে, সাহিলের মানসিক সমস্যা এবং কুসংস্কারের গভীরতা সাধারণের বাইরে।

হত্যার পর হানিমুন
মুসকান এবং সাহিল সৌরভকে খুন করে তার দেহ টুকরো টুকরো করে ড্রামে ভরে সিমেন্ট দিয়ে সিল করে দেয়। এরপর তারা দু’জনে হিমাচল প্রদেশে হানিমুনে চলে যায়। তবে পুলিশের জালে ধরা পড়ে তাদের এই পলায়ন।

বিচারের অপেক্ষায়
বর্তমানে মুসকান এবং সাহিল পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পিছনে আরও কোনো সহযোগী ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী দল। মিরাটের মানুষ এখনও এই ঘটনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সৌরভের জন্য ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে তার পরিজন ও সমাজ।