হাইকোর্টের ভুলে ধর্ষণের ন্যায়বিচার পেতে ৪০ বছর, দুঃখ প্রকাশ করলো সুপ্রিমকোর্ট

৩৯ বছরের পুরোনো এক ধর্ষণ মামলার নিষ্পত্তি হলো সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালত রাজস্থান হাইকোর্টের রায় বাতিল করে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং নাবালিকা নির্যাতিতার পরিবারকে ন্যায়বিচার পেতে চার দশক অপেক্ষা করতে হয়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮৬ সালে, যখন নির্যাতিতা নাবালিকা ছিলেন। ২১ বছর বয়সী এক যুবক তাকে ধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ১৯৮৭ সালের নভেম্বরে একটি নিম্ন আদালত অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। তবে মামলাটি পরবর্তীতে বিভিন্ন আদালতে ঘুরতে থাকে এবং ২০১৩ সালের জুলাইয়ে রাজস্থান হাইকোর্ট অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দেয়। হাইকোর্টের যুক্তি ছিল, নির্যাতিতা এবং সাক্ষীদের বক্তব্য জোরালো নয়।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সঞ্জয় করোলের বেঞ্চ হাইকোর্টের এই রায় বাতিল করে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। আদালত বলেছে, “এই নাবালিকা এবং তার পরিবারকে এই ভয়াবহ অধ্যায়টি শেষ করতে তাদের জীবনের প্রায় চার দশক অপেক্ষা করতে হয়েছে, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়।”
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, হাইকোর্টে যখন নির্যাতিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, তিনি কিছু না বলে চুপ করে ছিলেন এবং শুধু চোখের জল ফেলেছিলেন। আদালত বলেছে, নির্যাতিতার এই নীরবতা মানসিক আঘাতের কারণে ছিল এবং এটি অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়ার যুক্তি হতে পারে না। বিচারপতি বিক্রম নাথ বলেন, “কম বয়সে এই ভয়াবহ নির্যাতনের ফলে তিনি মানসিকভাবে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলেন। তার জন্য অভিযুক্তকে সাজা থেকে মুক্তি দেওয়া যায় না। পুরো মামলাটির বোঝা নাবালিকার ছোট কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়।”
আদালত আরও উল্লেখ করেছে, সাক্ষীদের বক্তব্য জোরালো নয় বলে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না, এমন কোনো কঠোর নিয়ম নেই। বিশেষ করে এই মামলায় চিকিৎসাগত এবং পরিস্থিতিগত প্রমাণের মতো অন্যান্য প্রমাণ উপস্থিত ছিল। আদালত প্রশ্ন তুলেছে, রাজস্থান হাইকোর্ট কেন নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখা বা খারিজ করার আগে সমস্ত প্রমাণ স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করেনি।
এছাড়াও, হাইকোর্টের রায়ে নির্যাতিতার নাম কীভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, তা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, অভিযুক্ত যদি ইতিমধ্যে সাজা ভোগ না করে থাকেন, তাহলে তাকে চার সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
এই রায়ের মাধ্যমে নির্যাতিতার পরিবার দীর্ঘ ৩৯ বছর পর ন্যায়বিচার পেলেও, এই মামলাটি ভারতের বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা এবং ধর্ষণ মামলায় ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সংগ্রামের একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্ত ধর্ষণ মামলায় সাক্ষীদের বক্তব্য এবং মানসিক আঘাতের গুরুত্বকে আরও একবার তুলে ধরেছে।