অবশেষে মুক্তি, আদালতের রায় শুনেই আবেগে ভাসলেন শান্তনু

প্রাথমিক স্কুল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দু’বছর জেলবন্দি থাকার পর বৃহস্পতিবার জামিন পেলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন যুবনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। সিবিআইয়ের মামলা থেকে তাঁকে জামিন দিয়েছে আদালত। এর আগে ইডি (ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)-এর মামলা থেকেও জামিন পেয়েছিলেন শান্তনু। এবার সিবিআইয়ের মামলা থেকেও মুক্তি পেলেন তিনি। সূত্রের খবর, আদালতের রায় শুনে সংশোধনাগারে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন শান্তনু।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রাথমিক স্কুল নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ইডি। এরপর একাধিকবার তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারী সংস্থা। পরে এই মামলার দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে যায় এবং সিবিআইয়ের হেফাজতে চলে যান শান্তনু। দীর্ঘদিন ধরে চলা তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার পর অবশেষে জামিন মিলল তাঁর।
এই মামলায় ইতিমধ্যেই জামিন পেয়েছেন তৃণমূল নেতা নীলাদ্রি দাস, তাপস মণ্ডল, কুন্তল ঘোষ, মানিক ভট্টাচার্য এবং জীবনকৃষ্ণ সাহার মতো ব্যক্তিত্বরা। উল্লেখ্য, জীবনকৃষ্ণ সাহা ও মানিক ভট্টাচার্য তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক। এছাড়া কুন্তল ঘোষ একসময় দলের যুব সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন। তবে গ্রেফতারের পর শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এই মামলায় আরেক অভিযুক্ত কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রও বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্ত। এছাড়া গত ৭ মার্চ এই মামলায় জামিন পেয়েছিলেন অয়ন শীল। তবে পুর নগর নিগম নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত থাকায় এখনও জেলমুক্তি হয়নি অয়নের।
সিবিআইয়ের দাবি ছিল, কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের একটি অডিও রেকর্ড তাদের হাতে এসেছে। এই রেকর্ডে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠস্বরও রয়েছে বলে অভিযোগ তদন্তকারী সংস্থার। তবে এই তথ্য এখনও পুরোপুরি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এমতাবস্থায় আদালতের রায়ে জামিন পেলেন শান্তনু।
আদালতের রায়ে আবেগাপ্লুত শান্তনু
সূত্রের খবর, আদালতের রায় শুনে সংশোধনাগারে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর মুক্তির আশায় তিনি ছিলেন। আদালতের রায়ে সেই আশা পূরণ হওয়ায় তিনি কেঁদে ফেলেন। তাঁর পরিবার এবং সমর্থকরাও এই রায়ে স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
প্রতিক্রিয়া
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন পাওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ এই রায়কে স্বাগত জানালেও বিরোধী দলগুলি তদন্ত প্রক্রিয়ায় গতি আনার দাবি জানিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় জড়িত ব্যক্তিদের জামিন পাওয়ায় তদন্তকারী সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তাঁদের ক্লায়েন্ট নির্দোষ এবং এই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাঁদের দাবি, শান্তনুকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফাঁসানো হয়েছে।
উপসংহার
প্রাথমিক স্কুল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পাওয়ার পর শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুক্তি নিঃসন্দেহে একটি বড় ঘটনা। তবে এই মামলায় এখনও অনেক অভিযুক্ত রয়েছেন, যাঁদের ভবিষ্যৎ আদালতের রায়ের ওপর নির্ভর করছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলির ভূমিকা এবং মামলার গতি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, আদালতের রায়ে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন পাওয়াকে তাঁর পরিবার এবং সমর্থকরা বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন।