বিশেষ: থাকবে ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন, যদি থাকে সমৃদ্ধ বন’-নইলে ধ্বংস হবে মানব সভ্যতা, বলছে বিজ্ঞানীরা

জীবনের জন্য গাছের গুরুত্বের একটি অনুস্মারক হতে চায়। কারণ, গাছ বা বৃক্ষ বিশুদ্ধ বাতাসের একটি উৎস এবং মানুষের জন্য নানা রকম ফল ও উপকরণ সরবরাহ করে।

গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের মতে, পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বনভূমি। একটি বনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ গাছ থাকে। একজন মানুষের শ্বাস নিতে বছরে ৭৪০ কেজি অক্সিজেন প্রয়োজন। গড়ে একটি গাছ বছরে ১০০ কেজি পর্যন্ত অক্সিজেন দেয়। ফলে মানুষের বেঁচে থাকা আর পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা একা হাতেই সামলায় বনাঞ্চলগুলো।

বন না থাকলে মানব সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। বন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চল। বন আমাদের পরিবেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বন আমাদের পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এমন কয়েকটি কারণ হলো:

কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ এবং অক্সিজেন উৎপাদন: বন বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন উৎপাদন করে। কার্বন ডাই অক্সাইড হলো একটি গ্রিনহাউস গ্যাস যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। বন এই গ্যাসের পরিমাণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সাহায্য করে।

জল সংরক্ষণ: বন বৃষ্টির জল ধরে রাখে এবং ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি খরা প্রতিরোধে সহায়তা করে।

মাটির ক্ষয় রোধ: বন মাটির ক্ষয় রোধ করে। মাটি ক্ষয় হলে ফসলের ফলন কমে যায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়।

প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা: বন পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাণবৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চল। বনে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে। বন এই প্রাণীদের আবাসস্থল এবং খাদ্যের উৎস।

মানব জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ: বন আমাদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে। যেমন: কাঠ, ফল, ঔষধি গাছ, ইত্যাদি।
বন না থাকলে এই সমস্ত উপকারিতা হারিয়ে যাবে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং মানব সভ্যতা বিপন্ন হবে।

এছাড়াও, বন আমাদের অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বন থেকে কাঠ, ফল, ঔষধি গাছ, ইত্যাদি সংগ্রহ করে আমরা অর্থ উপার্জন করতে পারি। বন না থাকলে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সুতরাং, বলা যায় যে বন হলো মানব সভ্যতার জন্য অপরিহার্য। বন রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

এ বিষয়টি মাথায় রেখে ১৯৭১ সালে ইউরোপীয় কনফেডারেশন অব অ্যাগ্রিকালচারের ২৩তম সাধারণ পরিষদে বিশ্ব বনায়ন দিবস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বন দিবস প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দুটি আন্তর্জাতিক স্মারক বিশ্ব বন দিবস এবং আন্তর্জাতিক বন দিবসকে একত্রিত করে প্রতি বছর ২১ মার্চ দিবসটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।