“স্বামী কেন আগ্রহী হবেন আপনার প্রতি?” সিঁদুর-মঙ্গলসূত্র না পরায় মহিলাকেই পাল্টা প্রশ্ন বিচারকের

গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক মহিলা। মামলার শুনানিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিযুক্ত বিচারক তাঁকেই পাল্টা প্রশ্ন করেন, “সিঁদুর-মঙ্গলসূত্র না পরলে স্বামী কেন আগ্রহী হবেন আপনার প্রতি?” এই ঘটনার বিবরণ লিঙ্কডইনে পোস্ট করেন পুণের এক আইনজীবী অঙ্কুর আর জাহাগিরদার। তাঁর পোস্ট মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় এবং বিচারকের মন্তব্য ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।

অঙ্কুর জানান, সম্প্রতি বিচ্ছিন্ন এক দম্পতির মধ্যস্থতা করছিলেন এক বিচারক। তখন অভিযোগকারী মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, “আমি দেখছি, আপনি মঙ্গলসূত্র ও সিঁদুর পরেননি। আপনি যদি বিবাহিত নারীর মতো আচরণ না করেন, তাহলে আপনার স্বামী কেন আপনার প্রতি আগ্রহ দেখাবে?”

এই মন্তব্য নিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় চর্চা শুরু হয়। নেটিজেনদের একাংশ বিচারকের এই মন্তব্যকে পিতৃতন্ত্রের প্রকাশ্য নিদর্শন বলে আখ্যা দিয়েছেন।

একই পোস্টে অঙ্কুর তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, এক মামলায় বিচারক তাঁর মহিলা মক্কেলকে ‘নমনীয়’ হওয়ার পরামর্শ দেন।

বিচারকের বক্তব্য ছিল, “একজন উচ্চ আয়ের মহিলা সর্বদা এমন স্বামী চান, যিনি তাঁর চেয়ে বেশি উপার্জন করেন। কিন্তু ভালো উপার্জনকারী পুরুষ এমন মহিলাকেও বিয়ে করতে পারে, যে তাঁর বাড়িতে বাসন মাজে। পুরুষরা কত নমনীয়! আপনিও নমনীয় হন। এত কঠোর হবেন না।”

এই মন্তব্যও ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এই ঘটনাগুলিকে “হিমশৈলের চূড়া” হিসেবে বর্ণনা করে অঙ্কুর বলেন, “দায়রা আদালতে এমন অনেক কিছু ঘটে, যা যে কোনও যুক্তিবাদী ব্যক্তির বিবেককে নাড়া দিতে পারে।”

তিনি আরও লেখেন, “আমাদের সমাজের কিছু জঘন্য বাস্তবতার প্রতি মানুষের এক ধরনের বেসলাইন সহনশীলতা রয়েছে। কেন এমনটা হয়, তা স্পষ্ট— পিতৃতন্ত্র ক্লাবের প্রথম নিয়ম হল, আপনি পিতৃতন্ত্র ক্লাবের কথা বলবেন না!”

এই পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর নেটিজেনদের একাংশ বিচারকের মন্তব্যকে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতিফলন বলছেন। অনেকেই বলছেন, আইনি ব্যবস্থার মধ্যে থাকা বিচারকরা যদি এমন মন্তব্য করেন, তাহলে নারীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ কঠিন হয়ে যায়।

বিচারকের মন্তব্য নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে, এবং এই ঘটনার পর বিচারকদের নিরপেক্ষতা ও লিঙ্গভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।