ভারতীয় ছবি ব্যবহার করে জালিয়াতির ফাঁদ? বাংলাদেশে প্রতারণার নতুন ছক

সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে, যেখানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিশু ও তার বাবা-মায়ের ছবি শেয়ার করে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হয়েছে। পোস্টে দাবি করা হয়, শিশুটির নাম অনিক দাস, সে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি এবং কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত। মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়। পোস্টে বাংলাদেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা বিকাশের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়েছে।

তবে আজতক ফ্যাক্ট চেকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই পোস্টটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। ছবিতে থাকা শিশুটি বাংলাদেশের নয়, বরং ভারতের। শিশুটির নাম কেভিএসএস শ্রিয়ানস, সে একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (ক্যানসারের একটি ধরন) রোগে আক্রান্ত ছিল। ভারতের ক্রাউডফান্ডিং ওয়েবসাইট কেট্টোতে (Ketto) শিশুটির চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছিল।

কীভাবে ধরা পড়ল ভুয়ো পোস্ট?
ভাইরাল ছবিগুলোকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খুঁজে বের করা হয়। ছবিগুলো কেট্টো ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়, যেখানে শিশুটির চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছিল। ক্যাম্পেইনে উল্লেখ করা হয়, শ্রিয়ানসের চিকিৎসার জন্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। ক্যাম্পেইনের আপডেট অনুযায়ী, শ্রিয়ানসের চিকিৎসা প্রায় সম্পন্ন হয়েছে এবং সে এখন অনেকটাই সুস্থ। স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে এবং নিয়মিত চেকআপ চলছে।

বাংলাদেশে ভুয়ো আবেদনের ইতিহাস
এটি প্রথমবার নয় যে ভারতীয় রোগীদের ছবি ব্যবহার করে বাংলাদেশে আর্থিক জালিয়াতির চেষ্টা করা হয়েছে। এর আগেও একাধিকবার একই পদ্ধতিতে ভুয়ো আবেদন করে মানুষকে প্রতারিত করার ঘটনা ঘটেছে। আজতক ফ্যাক্ট চেকের আগের রিপোর্টগুলোতেও এমন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন ভুয়ো আবেদন থেকে সতর্ক থাকতে ব্যবহারকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কোনো আবেদনে অর্থ প্রদানের আগে সঠিক তথ্য যাচাই করা জরুরি। বিশেষ করে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি এবং আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের কাছে পৌঁছানোর একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলেও এটি অপব্যবহারের শিকারও হচ্ছে। ভুয়ো আবেদন এবং জালিয়াতি থেকে সুরক্ষিত থাকতে সচেতনতা ও যাচাই-বাছাইয়ের কোনো বিকল্প নেই। আজতক ফ্যাক্ট চেকের মতো সংস্থাগুলো এ ধরনের ভুয়ো তথ্য চিহ্নিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সূত্র: আজতক ফ্যাক্ট চেক