“আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির”-স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন জয়শঙ্কর

৬ বছর আগে সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মিরে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় কতৃত্ব জারি করেছে ভারত। এখন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ভারতের পরবর্তী লক্ষ্য পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের (পিওকে) নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক থিঙ্কট্যাংক সংস্থা চ্যাথাম হাউসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করেন।

বুধবার চ্যাথাম হাউসের সঙ্গে আলোচনায় জয়শঙ্কর বলেন, “কাশ্মির ইস্যুতে আমরা ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। প্রথম ধাপে আমরা ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করেছি। দ্বিতীয় ধাপে জম্মু-কাশ্মিরের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে গতিশীল করা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দিয়েছি। তৃতীয় ধাপে আমরা সেখানে বিধানসভা নির্বাচন দিয়েছি, যেখানে প্রচুর ভোটার অংশ নিয়েছেন। এখন আমাদের চতুর্থ ধাপ হলো জম্মু-কাশ্মিরের চুরি যাওয়া অংশ উদ্ধার করা।”

জয়শঙ্কর আরও বলেন, “আরও স্পষ্টভাবে বললে, জম্মু-কাশ্মিরের যে অংশটি পাকিস্তান অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে, সেটিকে ভারতের মানচিত্রভুক্ত করা। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, যদি আমরা এই লক্ষ্য সফলভাবে অর্জন করতে পারি, তাহলে কাশ্মির ইস্যু নামে আর কোনো সংকট থাকবে না। এটিই এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান।”

১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার সময় থেকে কাশ্মির সংকটের শুরু। ব্রিটিশ শাসকরা জম্মু-কাশ্মিরের শেষ রাজা হরি সিংকে জম্মু-কাশ্মিরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব দেন। হরি সিং প্রথমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও পাকিস্তানি সেনাদের আগ্রাসনের মুখে তিনি জম্মু-কাশ্মিরের ভারতে অন্তর্ভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন। এরপর ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করে।

বর্তমানে জম্মু-কাশ্মিরের মোট ভূখণ্ডের ৪৩ শতাংশ ভারতের, ৩৭ শতাংশ পাকিস্তানের এবং বাকি ২০ শতাংশ চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চীনের অধিকৃত অঞ্চলটি সিয়াচেন নামে পরিচিত।

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই ধারা অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মিরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের ক্ষমতা সীমিত ছিল। ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মিরকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতোই কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে আনা হয়।

জয়শঙ্করের এই বক্তব্য ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। পাকিস্তান ইতিমধ্যে ভারতের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। তবে ভারতের দৃঢ় অবস্থান হলো, জম্মু-কাশ্মির সম্পূর্ণভাবে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরও ভারতের অধিকার।

ভারতের এই লক্ষ্য অর্জনে কী ধরনের কূটনৈতিক ও সামরিক কৌশল অবলম্বন করা হবে, তা এখন দেখার বিষয়। তবে জয়শঙ্করের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের অবস্থান দৃঢ় এবং তারা এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান চায়।

সূত্র: এনডিটিভি অনলাইন