“আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত”-হুঁশিয়ারি দিলো চীনের জিনপিং সরকার

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। বেইজিং স্পষ্ট করে বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে কোনো ধরনের যুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার পর এই হুঁশিয়ারি দেয় চীন। বুধবার (৫ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

ট্রাম্প সম্প্রতি চীনা পণ্যের ওপর আরও শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর জবাবে চীন মার্কিন কৃষি পণ্যের ওপর ১০-১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে পাল্টা জবাব দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতির দুই পরাশক্তি বাণিজ্য যুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

চীনের দূতাবাস গত মঙ্গলবার সরকারি বিবৃতির একটি অংশ পুনরায় শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (টুইটার) লিখেছে, “যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধ চায়, তা শুল্ক যুদ্ধ হোক, বাণিজ্য যুদ্ধ হোক বা অন্য কোনো যুদ্ধই হোক, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে প্রস্তুত।” এটি চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দেওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী হুঁশিয়ারি। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন চলছে এবং বেইজিংয়ে দেশের শীর্ষ নেতারা একত্রিত হয়েছেন।

এদিকে বুধবার চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ঘোষণা করেছেন, চীন ২০২৪ সালে প্রতিরক্ষা বাজেট ৭.২ শতাংশ বাড়িয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “এক শতাব্দীতে অদেখা পরিবর্তনগুলো দ্রুত গতিতে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হচ্ছে।” চীনের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি প্রত্যাশিত ছিল এবং এটি গত বছরের প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের নেতারা দেশের জনগণকে একটি বার্তা দিতে চাইছেন যে, বাণিজ্য যুদ্ধের হুমকি সত্ত্বেও চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী রয়েছে। একই সময়ে, চীন নিজেকে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল দেশ হিসেবে উপস্থাপন করতে আগ্রহী। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ তুলেছে।

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বুধবার বেইজিংয়ে দেওয়া বক্তৃতায় জোর দিয়েছেন যে, চীন বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চায়। তিনি বলেন, “চীন বিশ্বের জন্য একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

চীন অতীতেও যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা বলেছে। গত অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাইওয়ানের চারপাশে সামরিক মহড়া চালানোর সময় সৈন্যদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, সামরিক মহড়া এবং প্রকৃত যুদ্ধের প্রস্তুতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। বাণিজ্য যুদ্ধ, প্রযুক্তি নিয়ে প্রতিযোগিতা এবং ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। চীনের এই হুঁশিয়ারি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে চীনের এই চ্যালেঞ্জের জবাব দেয় এবং এই পরিস্থিতি বিশ্ব রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে।