মায়ানমার সীমান্তের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার, সন্ধান মিললো তিনটি বাঙ্কারের

মণিপুরে ভারত-মায়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার উদ্ধার করল অসম রাইফেলস ও পুলিশের যৌথ বাহিনী। এই অভিযানের সময় গ্রেফতার করা হয়েছে একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদীকেও।
অসম রাইফেলসের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিকের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এই বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছিল। এতে অটোমেটিক বন্দুক, পিস্তল, মর্টার, আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস), প্রচুর গুলি-সহ একাধিক সমরাস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়।
গত বুধবার তেঙ্গনুপাল জেলার মাওজং গ্রামের কাছে একটি চেকপোস্টে সন্দেহভাজন এক বাইকচালককে ধাওয়া করা হয়। তাঁর কাছ থেকে একে-৫৬ রাইফেল, ৯ এমএম পিস্তল-সহ একাধিক অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এই এলাকাটি মায়ানমার সীমান্তের খুব কাছেই।
এর আগে মঙ্গলবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অসম রাইফেলস ও পুলিশের যৌথ বাহিনী ইম্ফল পূর্ব জেলা থেকে এক বিচ্ছিন্নতাবাদীকে গ্রেফতার করে। জেরায় ধৃত ব্যক্তি কাংলিপাক কমিউনিস্ট পার্টি (পিপলস ওয়ার গ্রুপ)-এর সদস্য বলে স্বীকার করে।
সেদিনই আবার মায়ানমার সীমান্তের কাছে এসএল জুগাম এবং পয়েন্ট ১৬৮৩ এলাকায় অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। বাহিনীর কাছে খবর ছিল, ওই এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপস্থিতি রয়েছে। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে বাহিনী এবং এই অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়, তিনটি বাঙ্কারের সন্ধানও মেলে।
গ্রেফতার হওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই মণিপুরে কুকি ও মৈতৈ জনজাতির মধ্যে সংঘাত চলছে। ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার শিকার হয়েছে মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়নি।
হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং ও কাংপোকপি জেলা থেকে বহু মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এই সংঘাতের অন্যতম কারণ ছিল, মৈতৈদের তফশিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার দাবি। স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা এই দাবির তীব্র বিরোধিতা করেছিল, যার ফলে সংঘর্ষের আগুন জ্বলে ওঠে।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন এই বিষয়ে মিছিল বের করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই চূড়াচাঁদপুরে ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
এই মুহূর্তে বাফার জোন তৈরি করে মৈতৈ ও কুকিদের পৃথকভাবে রাখা হয়েছে, তবে তাতেও সংঘাত পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। মাঝে মাঝেই উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে অসম রাইফেলস ও পুলিশের এই যৌথ অভিযান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মায়ানমার সীমান্ত ঘেঁষে অবৈধ অস্ত্রের প্রবাহ বন্ধ করা ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নেটওয়ার্ক দুর্বল করাই বাহিনীর মূল লক্ষ্য। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আরও কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।