“মহাকুম্ভ মৃত্যুকুম্ভ হয়ে গিয়েছে”- যোগী সরকারের বিরুদ্ধে অব্যবস্থার অভিযোগ মমতার

উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলায় একাধিক দুর্ঘটনা ও পদপিষ্ট হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু নিয়ে সরব হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিধানসভায় রাজ্যপালের বাজেট ভাষণের জবাবি বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি কুম্ভের অব্যবস্থাপনার জন্য যোগী প্রশাসনকে তীব্র আক্রমণ করেন।
“মহাকুম্ভ মৃত্যুকুম্ভ হয়ে গিয়েছে”— তোপ মমতার
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি মহাকুম্ভ ও পবিত্র গঙ্গাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এভাবে অযথা হাইপ তৈরি করে লক্ষাধিক মানুষকে ডেকে এনে তাঁদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি করা কি সঠিক? বড়লোক আর ভিআইপিদের জন্য লক্ষ টাকার ক্যাব, অথচ সাধারণ মানুষকে ১৫-২০ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে! এটি মেনে নেওয়া যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “একটি এত বড় অনুষ্ঠানের জন্য সুপরিকল্পিত প্রস্তুতি প্রয়োজন। দুর্ঘটনা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করি না। কিন্তু কুম্ভে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের পর কেন্দ্র কতটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে?”
বাংলার মৃতদের ডেথ সার্টিফিকেট দেয়নি যোগী প্রশাসন, দাবি মমতার
মুখ্যমন্ত্রী জানান, মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে যেসব বাংলার পুণ্যার্থীরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের মৃত্যুর শংসাপত্র (ডেথ সার্টিফিকেট) বা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরিবারগুলিকে দেওয়া হয়নি। বরং মৃতদেহ তুলে দেওয়ার সময় তাঁদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক ও অমানবিক আচরণ। আমরা রাজ্য সরকার থেকে মৃতদের পরিবারের হাতে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।”
“গঙ্গাসাগরের জন্য ৬ মাস ধরে প্রস্তুতি করি, কুম্ভে পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট”
মুখ্যমন্ত্রী গঙ্গাসাগর মেলার সঙ্গে মহাকুম্ভের তুলনা টেনে বলেন, “গঙ্গাসাগর মেলার জন্য আমরা ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা করি। প্রত্যেক মন্ত্রীর নির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকে। সেখানে কোনও বিশৃঙ্খলা হয় না। কিন্তু কুম্ভের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।”
প্রসঙ্গত, চলতি বছর প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা ১৪৪ বছর পর বিরল এক জ্যোতির্বিজ্ঞান সংযুক্তিতে হচ্ছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার চলেছে। এই বিপুল প্রচারের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ কুম্ভে যাচ্ছেন, কিন্তু প্রশাসনের পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাবেই একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ।
বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, এই মৃত্যুগুলির দায় সরাসরি উত্তরপ্রদেশ সরকারের ওপরই চাপাচ্ছেন তিনি। তবে যোগী আদিত্যনাথ বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম মুখে না আনলেও তাঁর মন্তব্যের নিশানা যে কেন্দ্র ও উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার, তা স্পষ্ট।