নদীর পাড়েই কাটে বেশিরভাগ সময়, চা-পকোড়ার দোকান সামলেও কালো গাউন পরার লক্ষ্যে লড়ছেন অর্পিতা

আদালতে কালো গাউন পরে সওয়াল করবেন—ছোটবেলা থেকেই এই স্বপ্ন তমলুকের অর্পিতা মাইতির চোখে। সেই স্বপ্নকে সত্যি করতে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছেন তিনি। তবে, অর্পিতার পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। কিন্তু অর্পিতার স্বপ্ন যাতে অর্থের অভাবে থেমে না যায়, তাই তিনি নিজেই নেমে পড়েছেন লড়াইয়ে। বাবা-মায়ের চা-পকোড়ার দোকানে দিনের অনেকটা সময় কাটান অর্পিতা, আর তার ফাঁকেই চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা।
অর্পিতা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্রী। তমলুক শহরের রাজকুমারী সান্ত্বনাময়ী স্কুল থেকে ৭৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। এরপরই তিনি বাবা-মাকে তার আইনজীবী হওয়ার স্বপ্নের কথা জানান। কিন্তু একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে আইনের পড়াশোনার খরচ বহন করা বেশ কঠিন। তাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস একটি ছোট্ট চা-পকোড়ার দোকান। তবুও অর্পিতার বাবা-মা তার স্বপ্নকে সমর্থন করেন এবং তাকে ল কলেজে ভর্তি করেন।
এরপর শুরু হয় অর্পিতার আসল লড়াই। একদিকে কলেজের পড়াশোনা, অন্যদিকে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ—সব মিলিয়ে এক কঠিন রুটিন মেনে চলেন অর্পিতা। প্রতিদিন সকাল আটটায় ট্রেনে করে কলেজে যান, আবার বিকেল চারটায় ফিরে এসে বাবা-মায়ের সঙ্গে চা-পকোড়ার দোকানে বসেন। রাতে দোকান গুছিয়ে বাড়ি ফিরে আবার পড়াশোনায় মন দেন।
বর্তমানে প্রতিদিন বিকেলে মাকে সাইকেলে চাপিয়ে তমলুকের নদী পাড়ে আসেন অর্পিতা এবং রাত পর্যন্ত সেখানেই চা-পকোড়ার দোকান চালান। রাতে দোকান গুছিয়ে বাড়ি ফেরেন। পড়াশোনার খরচ চালাতে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রায় ২ লক্ষ টাকার বেশি ঋণও নিয়েছেন তিনি।
একদিকে পড়াশোনার চাপ, অন্যদিকে ঋণের বোঝা, তার ওপর পরিবারের দায়িত্ব—সবকিছু সামলেও নিজের লক্ষ্যের দিকে অবিচল অর্পিতা। তিনি জানান, আইনের ছাত্রী হয়েও বাবা-মায়ের সঙ্গে চা-এর দোকানে বসতে তার কোনো দ্বিধা নেই। কারণ, কালো গাউন পরে আদালতে সওয়াল করাই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। এভাবেই নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলেছেন লড়াকু অর্পিতা।