কোথা থেকে আসছে এতো নকল মদের স্পিরিট? তদন্তে উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

কোচবিহার সহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে ভুটান ও অসমের মদের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নকল মদের কারবার। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে মানুষের জীবনহানির ঝুঁকিও বাড়ছে। নকল মদ তৈরিতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হল স্পিরিট, যা খোলা বাজারে সহজে পাওয়া যায় না। এমনকি, পশ্চিমবঙ্গে স্পিরিট উৎপাদনও হয় না। এই রাজ্যে বৈধ মদ তৈরির জন্য উত্তর প্রদেশ ও ঝাড়খণ্ড থেকে স্পিরিট আনা হয়। প্রশ্ন হল, নকল মদ কারবারিরা কোথা থেকে এত স্পিরিট পাচ্ছে? এই প্রশ্নের তদন্ত করতে গিয়েই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
তদন্তে জানা গেছে, কোচবিহার সংলগ্ন অসমের ধুবড়ি জেলার একটি ধাবা থেকে এই বিপুল পরিমাণ স্পিরিট সরবরাহ করা হচ্ছে। অসমে বৈধ মদ তৈরির জন্য উত্তর প্রদেশসহ অন্যান্য রাজ্য থেকে স্পিরিট কেনা হয়। সেই স্পিরিট পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ধুবড়ি দিয়ে অসমে যায়। পথে স্পিরিট বোঝাই গাড়িগুলো একটি নির্দিষ্ট ধাবায় দাঁড়ায়। তখনই চালকরা ধাবার মালিকদের যোগসাজশে লিটার লিটার স্পিরিট চুরি করে তাদের হাতে তুলে দেয়। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ ব্যবসা চলে আসছে। পরে সেই স্পিরিট নকল মদ ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। আবগারি বিভাগ সূত্রে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
যেহেতু বাংলায় স্পিরিট তৈরি হয় না, তাই বিভিন্ন পথে অন্য রাজ্য থেকেও গোপনে স্পিরিট আনা হয়। এতে স্পষ্ট যে এই চক্র অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। সম্প্রতি, আবগারি দপ্তরের একটি দল কোচবিহার-২ ব্লক থেকে মারুগঞ্জের এক ব্যক্তিকে স্পিরিট, ক্যারামেল ফুড কালার ও বিষাক্ত মিথানল সহ গ্রেপ্তার করে। কর্মকর্তারা মনে করছেন, মিথানল দিয়ে মদ তৈরি হলে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। এই মিথানল মূলত বিভিন্ন কারখানায় ব্যবহার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি কোথা থেকে এই উপকরণ পেল এবং কাদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। উদ্ধার হওয়া মিথানল ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য।
দেশি ও বিদেশি মদ নকল হওয়ার এই প্রবণতা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে চিন্তিত করে তুলেছে। এতে শুধু রাজস্বের ক্ষতিই হচ্ছে না, বরং এই কারবার যেকোনো সময় বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।