2025 সালে GST তে বড়সড় পরিবর্তন? জেনেনিন কতটা সুবিধা হতে পারে সাধারণ মানুষের

ভারতের পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) ব্যবস্থা ২০২৫ সালে এসে একটি আধুনিক ও স্বচ্ছ কর কাঠামো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ব্যবস্থা দেশের পরোক্ষ কর কাঠামোকে সম্পূর্ণরূপে রূপান্তরিত করেছে, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রম সহজীকরণ থেকে শুরু করে অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জিএসটির কাঠামো, সুবিধা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্পর্কে বোঝা এখন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

জিএসটি কী?
জিএসটি হল একটি বিস্তৃত, বহুস্তরীয় এবং গন্তব্যভিত্তিক কর ব্যবস্থা, যা প্রতিটি মূল্য সংযোজন স্তরে প্রযোজ্য। এটি পূর্ববর্তী কর ব্যবস্থার মতো একাধিক স্তরে কর আরোপ করে না, ফলে “কর-ওপর-কর” সমস্যা দূর হয়েছে। জিএসটি তিনটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত:

কেন্দ্রীয় জিএসটি (CGST)

রাজ্য জিএসটি (SGST)

সমন্বিত জিএসটি (IGST)

ভারত একটি দ্বৈত জিএসটি মডেল অনুসরণ করে, যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই কর আরোপ করে। বর্তমানে পাঁচটি কর হার রয়েছে: ০%, ৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮%। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন খাদ্যশস্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবাগুলি ০% হারের অন্তর্ভুক্ত, অন্যদিকে বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর পণ্য ২৮% হারের আওতায় পড়ে।

জিএসটি নিবন্ধন ও নিয়মাবলি
যেসব ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার নির্দিষ্ট সীমার বেশি, তাদের জন্য জিএসটি নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। ২০২৫ সালের হিসাবে, বেশিরভাগ রাজ্যে পণ্য সরবরাহকারীদের জন্য ₹৪০ লক্ষ এবং পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য ₹২০ লক্ষ পর্যন্ত সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কিছু বিশেষ রাজ্যে এই সীমা কম। ছোট ব্যবসার জন্য কম্পোজিশন স্কিম চালু রয়েছে, যেখানে নির্দিষ্ট হার অনুযায়ী কর প্রদান করতে হয়, যা করের বোঝা ও জটিলতা কমায়।

কর প্রতারণা প্রতিরোধ ও অনলাইন নজরদারি
জিএসটি রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজীকরণের জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের নিয়মিত GSTR-1, GSTR-3B ও GSTR-9 দাখিল করতে হয়। নির্দিষ্ট লেনদেনের জন্য ইনভয়েস ম্যাচিং ও ই-ইনভয়েস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা কর ফাঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ই-ওয়ে বিল (e-Way Bill) ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যেখানে ₹৫০,০০০-এর বেশি মূল্যের পণ্য পরিবহনের জন্য পূর্বানুমোদিত বিলের প্রয়োজন হয়। এর ফলে তদারকি আরও কঠোর হয়েছে এবং পণ্য পরিবহন সহজতর হয়েছে।

জিএসটির ব্যবসায়িক প্রভাব
জিএসটি চালুর ফলে বহুস্তর কর ব্যবস্থা বাতিল হয়ে একক কর ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে।

উৎপাদকদের জন্য: এটি আবগারি শুল্ক, ভ্যাট এবং অন্যান্য করের পরিবর্তে সহজ ও স্বচ্ছ কর ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।

খুচরা বিক্রেতারা: কর কাঠামোর সরলতার কারণে উপকৃত হয়েছেন।

পরিষেবা খাত: এখন একক কর ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়, ফলে ব্যয় হ্রাস ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে ছোট ব্যবসাগুলোর ক্ষেত্রে ডিজিটাল কর ফাইলিং ও নিয়মিত রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

জিএসটির ভবিষ্যৎ
২০২৫ সালে জিএসটির ভবিষ্যত পরিকল্পনায় কর রিটার্ন সংখ্যা হ্রাস, একক জিএসটি রিটার্ন ব্যবস্থা, কর হার যৌক্তিককরণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির সংযোজন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপগুলি জিএসটি ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও ব্যবহারকারীবান্ধব করে তুলবে।

উপসংহার
সার্বিকভাবে, জিএসটি ভারতের কর ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করেছে, ব্যবসা পরিচালনাকে সহজ করেছে এবং অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা এনেছে। যদিও এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, ধারাবাহিক সংস্কার ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এটিকে আরও কার্যকর করে তুলবে। ২০২৫ সালে জিএসটি ব্যবস্থা ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy