“বর্ষা এল বাংলায়”-পড়েনিন বর্ষা ও বাঙালিদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন

জলবতী মেঘের বাতাস নিয়ে এসেছে বর্ষা, ষড়ঋতুর এই দেশে। আষাঢ়ের প্রথম দিনে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্ষা ঋতুর বন্দনা করেছেন তার অমর কবিতায়, “এসো শ্যামল সুন্দর,/ আনো তব তাপহরা তৃষাহরা সঙ্গসুধা।/ বিরহিণী চাহিয়া আছে আকাশে।”
গ্রীষ্মের উত্তাপের পর বর্ষার আগমন মধুর মৃদু বাতাসের মতো। মাঠ, ঘাট, নদী, খাল – সবখানে জলেরই উল্লাস, জলেরই খেলা।
এই বছর বর্ষার আগমনী বার্তা এসেছে আগে থেকেই। ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে ভেজা শুরু হয়েছে এপ্রিল মাস থেকেই।
বাঙালির জীবনে বর্ষার উপস্থিতি কেবল কাব্য, সংগীত ও চিত্রকলায় সীমাবদ্ধ নয়। গ্রামবাংলার প্রকৃতির সাথে মিশে আছে বর্ষার সুন্দর ছবি।
রবীন্দ্রনাথের জীবনেও বর্ষার গভীর প্রভাব ছিল। জমিদারি দেখাশোনার সুবাদে তিনি যখন শিলাইদহ-শাহজাদপুর-পতিসর অঞ্চলে এসেছিলেন, তখন থেকেই প্রকৃতির এই রূপ তাঁর মনে গেঁথে যায়।
আষাঢ় ও শ্রাবণ নিয়ে রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ অসংখ্য গান ও কবিতা। ‘গীতবিতান’-এর অন্তর্ভুক্ত প্রকৃতিবিষয়ক গানের মধ্যে বর্ষা ঋতুর গানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
‘সোনার তরী’ কবিতায় বর্ষার অপরূপ ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন কবি। ‘গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।/ কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।’ – এই কবিতার লাইনগুলো আজও মুখস্থ অনেকের।
বৃষ্টি মানেই রাশি রাশি সুখস্মৃতির জানালা খুলে যাওয়া। কাদা মাখা রাস্তায় স্কুল থেকে বাড়ি ফেরা, বৃষ্টির গান শোনা, বৃষ্টিধোয়া আকাশে হংস-মিথুনের উড়ে যাওয়া – এসব আজও অনেকের মনে ভেসে ওঠে।
শহরে বর্ষাকাল অন্য রূপে উপভোগ করা হয়। খিচুড়ির সুবাস ছড়িয়ে পড়ে অনেক বাড়িতে। রেস্তোরাঁগুলোতে চলে ‘বৃষ্টি-ভোজ’।
বৃষ্টির সাথে জলের রুপালি শস্য ইলিশের অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। তবে ইদানীং মহার্ঘ্য ইলিশ সকলের নাগালের বাইরে।
বর্ষা শুধু ঋতু নয়, বাঙালির জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, গানে, গল্পে ফুটে উঠেছে বর্ষার রূপ, বর্ষার আবেগ।