বিশেষ: ছাগলের খামার করে উপার্জন করুন প্রতিমাসে৫০,০০০টাকা, জেনেনিন পালন পদ্ধতি

ছাগলের খামার করা একটি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে। দেশের বিভন্ন স্থানে ছাগলের খামার করে বেকার যুবকরা তাদের কর্মস্থান তৈরি করে নিচ্ছেন। তবে ছাগলের খামার থেকে বেশি লাভবান হতে হলে বেশ কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে খামারের জন্য ছাগল কেনার পর তার যত্নের বিষয়টি।

নতুন খামারীরা অনেকেই জানেন না খামারে নতুন ছাগল কেনার পর কী করতে হবে। ছাগল পালনের ক্ষেত্রে নতুন ছাগলের মান যাচাই করে কেনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি কেনার পর এর যত্নও গুরুত্বপূর্ণ। এবার জেনে নেওয়া যাক খামারে নতুন ছাগল কেনার পর যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

খামারের জন্য কেনা ছাগল অনেক সময় অসুস্থ থাকতে পারে বা কোনো রোগের জীবাণু বহন করতে পারে তাই কেনা ছাগলকে কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ বা ২১ দিন আলাদা জায়গায় রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

কেনা ছাগল বাইরে থেকে বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন করে নিয়ে খামারের অন্য ছাগলগুলোকে আক্রান্ত করতে পারে তাই ছাগলটি ভালো কোনো জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ছাগলটিকে ভালোভাবে কৃমি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদি গর্ভবতী থাকে সেক্ষেত্রে ভেটেরিনারি ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী কৃমি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ছাগলের সবচেয়ে ভয়ংকর রোগ পিপিআর থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই ক্রয়কৃত ছাগলকে পিপিয়ারের ভ্যাকসিন দিতে হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার জন্য পশু হাসপাতালে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে হবে। উপরের ধাপগুলো সম্পন্ন করার পর ছাগলকে গোসল করিয়ে তারপর মূল খামারে নিয়ে আসতে হবে।

এভাবে নিয়ম মেনে নতুন কেনা ছাগল পালন শুরু করলে এর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

বাণিজ্যিকভাবে ছাগল পালনের জন্য সর্ব প্রথমে ভালো জাতের ছাগল নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২টি ছাগল নিয়ে খামার শুরু করাই উত্তম। অল্প সংখ্যক ছাগল নিয়ে শুরু করলে প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় সম্পর্কে হাতে কলমে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।

আর এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে ছাগলের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যদিকে ছাগল নির্বাচনের সময় ছাগলের বয়সের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে দুই মাস থেকে ছয় মাস বয়সী ছাগল ভালো হতে পারে। কারণ এই বয়সী ছাগলের বাজার দাম তুলনামূলক কম।

পাশাপাশি ছাগলের বয়স কম হলে বিক্রির উপযুক্ত হওয়া বা প্রজননের আগে দীর্ঘ সময় ধরে খামারের চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আর ছাগলের বাচ্চা অবশ্যই কোনো দুগ্ধ উৎপাদনকারী ছাগলের খামার থেকে সংগ্রহ করবেন না। কারণ তারা বেশির ভাগ সময় তাদের খামারের সবচেয়ে নিম্নমানের ছাগলগুলোই বিক্রি করে থাকে।

তাছাড়া প্রতি ৮ থেকে ১০টি ছাগলের বিপরীতে একটি ভালো জাতের পাঠা রাখা যেতে পারে। এতে ছাগলের প্রজনন সহজ হবে। ছাগল লালন পালনজনিত ব্যয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন রকমের হতে পারে।

ছাগলের দাম কেমন হতে পারে সেটি জানার জন্য স্থানীয় কয়েকটি বাজার অথবা কৃষকের খামার ঘুরে দেখে ধারণা নেওয়া যেতে পারে। এতে বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা সহজ হবে।

তাছাড়া ছাগলের বাসস্থানের জন্য ঘর নির্মাণে কত খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে স্থানীয় মিস্ত্রীদের কাছ থেকে ধারণা নেওয়া যেতে পারে। ছাগলের দাম ও ঘর নির্মাণের খরচের ধারণা নেওয়ার পর বিনিয়োগের টাকা কিভাবে সংগ্রহ করা যায় সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

ছাগলের বাসস্থানের জন্য শুষ্ক, উচুঁ এবং বর্ষাকালে জল জমে না এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। তাছাড়া আশপাশের পরিবেশ খোলামেলা হতে হবে যেন সহজেই পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। তাছাড়া জল নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।

প্রতি একজোড়া ছাগলের জন্য ৫ থেকে ৬ ফুট লম্বা, ১.৫ থেকে ২.৫ ফুট চওড়া এবং ৮ থেকে ৯ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বাসস্থানের প্রয়োজন হয়। ছাগলকে সরাসরি মাটিতে বা ফ্লোরে না রেখে কাঠ অথবা বাঁশের তৈরি মাচার উপর রাখতে হবে।

মাটি থেকে মাচার উচ্চতা কমপক্ষে ১ ফুট হতে হবে। ছাগলের মল-মূত্র নিষ্কাষণের জ্ন্য মাচায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে। পাশাপাশি শীতকালে মাচার উপর খড় বিছিয়ে দিতে হবে। শীতকাল ছাড়াও বৃষ্টির দিনের জন্য বাসস্থানের চারপাশে চাদর বা ত্রিপাল দিয়ে আবৃত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেন ছাগলের ঘরে কিছুতেই বৃষ্টির জল প্রবেশ করতে না পারে।

ছাগল লালন পালনের জন্য নির্মিত গৃহের চারপাশের বেড়া অত্যন্ত মজবুত হওয়া জরুরি। যেন কিছুতেই কোনো বন্যপ্রাণী কিংবা কুকুর শিয়াল আক্রমণ করতে না পারে। তাছাড়া খামার ঘরে যে কোনো অপ্রত্যাশিত ব্যক্তির প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকতে হবে।