SPORTS: আফগান স্পিন যেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, ভেদ করা মুশকিল

একটা কথা চলে আসছে অনেক দিন থেকে। বারমুডা অঞ্চলে নাকি জাহাজ, নৌকা বা আকাশ পথে যাওয়ার সময় সবকিছু রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। খোঁজ-খবর নাকি আর পাওয়া যায় না।
চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগান স্পিন যেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের কাছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতো। বুঝে না বুঝে তারা সেই স্পিন জালে আটকা পড়ছেন। শুক্রবার ডাচদের বেলয়াও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ রান আউট বাদে যে কয়জন ঘায়েল হন সবাই ওই স্পিনেই।

ঘূর্ণিই যে আফগানিস্তানের মূল অস্ত্র, সেটা অন্তত এতদিনে বুঝতে বাকি নেই। যে ম্যাচে তাদের স্পিনাররা সাফল্য পান সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষ পিছু হটতে বাধ্য হন। চলমান বিশ্বকাপে এমন নজির একাধিকবার দেখালেন রশিদ-মুজিবরা।

হয়তো তাদের যাত্রাটা ভালো হয়নি। বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে কুলিয়ে উঠেনি দলটি। কিন্তু দেরিতে হলেও একের পর এক বাঘা দলকে নাকানি চুবানি খাইয়েছে। আর সেই সব জয়ের চিত্রনাট্য লিখে দিয়েছেন স্পিনারাই। পরিসংখ্যানও সেই কথা বলবে।

ভারতের সঙ্গে তাদের রশিদ খান কেবল সাফল্যের দেখা পেয়েছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার দিনে মুজিব-নবি-রশিদরা ছিলেন দুর্বার। এই তিনজনই নেন আট উইকেট।

এরপর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে স্পিনাররা খানিকটা আশা দেখালেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হারতে হয়েছে তাদের। যে ম্যাচে রশিদ, মুজিব একটি করে উইকেট নিয়েছিলেন। এরপর পাকিস্তানকে পুরোপুরি ঘোল খাইয়ে ছাড়ে দলটি।

সেদিন তো চমক হিসেবে তরুণ নূরকে নামিয়ে দেয় আফগানরা। আর নেমেই ঝলক দেখান তিনি। তুলে নেন পাকিস্তানের তিন ব্যাটারকে। তার সঙ্গে নবি নেন এক উইকেট। বাকি কাজটা পেসাররা করেন।

তবে মূল ইমপ্যাক্ট ফেলেছিলেন নূরই। তার ঘূর্নিতেই ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন। শেষ পর্যন্ত ওই ম্যাচেও জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান। দুই জয়ে বাড়ে তাদের আশা। সেমির স্বপ্ন দেখা শুরু করে একটু একটু করে।

নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে শ্রীলংকাকে ভাগে পেয়ে আবার জ্বলে উঠে আফগান স্পিনাররা। এবার তাদের সঙ্গে মূল কাজটা করেন পেসার ফারুকি। তিনি একদিক সামলান আর রশিদরা আরেকদিক।

দুই পক্ষের জোড়া হানায় লংকান ব্যাটিং পুরোপুরি তছনছ। সেই ম্যাচে দুটি উইকেট নিয়েছিলেন মুজিব আর একটি রশিদ। সর্বশেষ শুক্রবার ডাচদের সঙ্গেও তাদের স্পিন ঘোড়া ছুটেছে ক্ষিপ্র গতিতে।

রান আউটের ফাঁদে পড়ে অর্ধেক কোমর ভাঙার পর বাকি উইকেটগুলো সাবাড় করেন স্পিনাররা। যেখানে নূর, নবি ও মুজিব মিলে নেন ছয় উইকেট। আফগানদের সামনে আর দুটি ম্যাচ। একটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরেকটি দক্ষিণ আফ্রিকা।

দুই দলের সঙ্গে আফগানিস্তানের তুলনা চলে না। ধারেভারে তাদের আশেপাশেও নেই রশিদরা। আফগানদের আর কিছু নিয়ে তারা না ভাবুক অন্তত স্পিন আক্রমণ নিয়ে ভাবতেই হবে।

আসলে এই ভাবনাটা তাদের এমনি এমনি নয়, বাধ্য হয়ে তারা স্পিন ঠেকানোর কৌশল খুঁজবে। মেলাতে চাইবে টপ ক্লাস স্পিনারদের গোলকধাঁধাঁ। হয়তো ডাচ বধের পর আর জেতা হবে না আফগানদের।

কিন্তু ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপটা দেশটির মানুষদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ যে দল এবারের আগে বিশ্বকাপে মাত্র একবার জিতেছিল, তাও স্কটল্যান্ডের সঙ্গে। তারা কিনা এবার বলেকয়ে বড় বড় দলকে মাটিতে নামিয়েছে।

তবে এটাও সত্য। বাকি দুই ম্যাচের একটি জিতলেও অবাক হওয়ার কিছু রইবে না। কারণ এই স্পিনে তালগোল পাকাতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। যদি কোনো কারণে রান চেজ করার পরীক্ষা দিতে হয় তাহলে তো কথায়ই নেই।

প্রোটিয়ারা এমনিতেই ভেঙে পড়তে পারে। যেমনটা হয়েছিল ডাচদের সঙ্গে। সেক্ষেত্রে আফগান রুপকথা হলেও অবিশ্বাস করার কিছু থাকবে না। হয়তো অন্য দলের ডুবে যাওয়ার সুযোগে দিনশেষে গোলটা দেবেন ডার্কহর্স আফগানিস্তানই।

শুধু স্পিন নয় দিনে দিনে তাদের ব্যাটারদের সাহসও বেড়েছে। মাথা ঠান্ডা করে ম্যাচের শিরা বুঝে দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। যেটা এখন প্রতিপক্ষদের জন্য মাথাব্যথার বড় কারণ।