নেই জল-শৌচাগার, ওষুধ খেয়েই ঋতুস্রাব আটকে রাখছেন গাজার নারীরা

ইসরায়েলের তীব্র হামলায় বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। ছোট্ট এ ভূখণ্ডের মানুষ এখন প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ছুটছেন। কিন্তু তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, কোথাও মিলছে না আশ্রয়। মানবিক সংকটময় এই সময়ে সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে পড়েছে সেখানে বসবাস করা নারী ও শিশুরা।
গাজার গৃহহীন লাখ লাখ মানুষ গাদাগাদি করে অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। এদিকে জল এবং জ্বালানি বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। ফলে পান করার মত পর্যাপ্ত জল পাচ্ছে না সেখানকার মানুষ। অন্যদিকে স্যানিটারি ন্যাপকিনের মত মাসিক স্বাস্থ্যসুরক্ষা প্রদানকারী পণ্য এখন আর গাজার নারীদের হাতের নাগালে নেই। এমন পরিস্থিতিতে তারা ঋতুস্রাব বন্ধ রাখতে নানা ধরণের ওষুধ খাচ্ছেন।
এসব ওষুধ সেবনের ফলে অনিয়মিত রক্তপাত, মাথা ঘোরা ও বমি ভাব, স্বাভাবিক মাসিক চক্রে পরিবর্তন, মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের টানা বোমাবর্ষণের কারণে কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে তাদের পালা করে শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। জল না থাকায় কয়েক দিন পর পর হয়তো তারা গোসলের সুযোগ পান। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এখন তাদের কাছে বিলাসিতার পর্যায়ে চলে গেছে।
এছাড়া সড়কগুলোতে হামলার ফলে ওষুধের দোকোন পর্যাপ্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পনের সরবরাহ নেই। তাই নারীরা ঋতুস্রাব বন্ধ রাখতে ওষুধ সেবনের মত বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছেন।
দুই সপ্তাহ আগে পালিয়ে দেইর আল-বালাহ শরণার্থী ক্যাম্পে এক আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৪০ বছরের সালমা খালেদ। তিনি বলেন, দোকানে স্যানিটারি প্যাড নেই, অনেকে মিলে একটি শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। তাই আমি আমার মেয়েকে দোকানে পাঠিয়ে মাসিক বিলম্বিত করার ওষুধ কিনে এনেছি। হয়তো এই যুদ্ধ শীঘ্রই শেষ হবে। আমাকে একবারের বেশি এই ওষুধ সেবন করতে হবে না। আমি শরীরে এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তায় আছি।
পরিবার নিয়ে খান ইউনিসের পশ্চিমে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন সামিরা আল-সাদি। তিনি বলেন, মাত্র কয়েক মাস আগে তার ১৫ বছরের মেয়ের মাসিক শুরু হয়েছে। মাত্র মাসিক শুরু হওয়ায় এখনো যে সব কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। তার উপর এখন গাদাগাদি করে এই আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতে হচ্ছে। তার স্যানিটারি প্যাড এবং নিজেকে পরিষ্কার রাখার জন্য পানি দরকার। অথচ, অতি গুরুত্বপূর্ণ এ দুটো জিনিস এখন চাইলেই পাওয়া যাচ্ছে না।
মেয়ের জন্য মাসিক বিলম্বিত করার ওষুধ কিনবেন কিনা সেটাও বুঝে উঠতে পারছেন না সামিরা। তিনি এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং তার মেয়ের শরীরে ওই ওষুধের কি ধরণের প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
৩৫ বছরের রুবাই সেইফ বলেন, এখানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলে কিছু নেই। শৌচাগারে পানি নেই। পানির জন্য আমরা যখন তখন বাইরে যেতেও পারছি না। সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকি, ঘুম হয় না, ঠাণ্ডা নিবারণে পর্যাপ্ত কম্বল নেই। এতকিছুর মধ্যে আমার জন্য মাসিকের সময় হওয়া পেট ব্যথা সহ্য করা কঠিন।
গত ৭ অক্টোবর গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসায়েলের। এতে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যাদের মধ্যে ৩ হাজার ৬৪৮ জনই শিশু।
ওই দিন ভোরে গাজা থেকে হামাস বৃষ্টির মতো ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায়। সীমান্ত বেড়া ভেঙ্গে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করে রীতিমত হত্যাযজ্ঞ চালায়। সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হত্যা করে ১৪শ’র বেশি জনকে। অপহরণ করে নিয়ে যায় আরো প্রায় ২৩০ জনকে।
ওই হামলার প্রতিশোধ নিয়ে হামাসকে নির্মূল করার অভিযানে নেমেছে ইসরায়েল। যার ফলে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহি গাজাবাসী।