10 বছর আগেই পুলিশের খাতায় নাম উঠেছিল শ্বেতার, প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

ডোমজুড় পর্ন-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শ্বেতা খান, যার আসল নাম মহসিনা বেগম এবং বাঁকড়ার শেখ পাড়ায় যিনি পরিচিত ‘ফুলটুসি’ নামে, তার অপরাধের খাতা খুললে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগ, ২০১৫ সাল থেকেই অপরাধ জগতে তার নাম জড়ানো। এমনকি, প্রথম স্বামীর সম্পত্তি দখলের জন্য ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে গুলি চালানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার শ্বেতার বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে যে একটি চুলের গোছা উদ্ধার হয়েছে, তা এই মামলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

চুলের ডিএনএ পরীক্ষা: নতুন মোড়?
মঙ্গলবার শ্বেতার বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে পুলিশি তল্লাশিতে ফ্ল্যাটের পিছন থেকে এক গোছা চুল উদ্ধার হয়েছে। এই চুলের নমুনা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, এই চুল সোদপুরের নির্যাতিতার হতে পারে। খড়দা থানায় দায়ের হওয়া ‘জিরো এফআইআর’-এ নির্যাতিতা অভিযোগ করেছিলেন যে, তার চুল কেটে নেওয়া হয়েছিল।

হাওড়া পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “চুলের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ মিললে ধর্ষণ-সহ জোর করে চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগের পাকা প্রমাণ মিলতে পারে।” এমনটা হলে শ্বেতা এবং তার ছেলে আরিয়ান খানের বিপদ আরও বাড়বে। যদিও মা ও ছেলে বর্তমানে পলাতক।

পর্নগ্রাফি ও পাশবিক অত্যাচার:
গত শুক্রবার সকালে শ্বেতা খান এবং তার ছেলে আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে সোদপুরের এক যুবতীকে ডোমজুড়ের ফ্ল্যাটে পাঁচ মাস ধরে বন্দি করে রেখে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতার দাবি, তাকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পর্নগ্রাফি শুট করাতে চেয়েছিল মা ও ছেলে। রাজি না হওয়ায় তাকে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়।

শ্বেতার ওড়িশা যোগ ও রাজনৈতিক সংযোগ:
পলাতক শ্বেতা ও আরিয়ানের খোঁজে নেমে তদন্তকারীরা শ্বেতার সাম্প্রতিক ওড়িশা যোগ খুঁজে পেয়েছেন। জানা গিয়েছে, গত মাসে ওড়িশায় গিয়ে সে একটি ফটোশুট করিয়েছিল এবং সেখানে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার তথ্যও মিলেছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ছেলেকে নিয়ে প্রতিবেশী রাজ্যেই গা-ঢাকা দিয়েছে শ্বেতা?

এর পাশাপাশি, শ্বেতা খানের একাধিক তৃণমূল নেতার সঙ্গে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। হাওড়া ও কলকাতার তাবড় তৃণমূল নেতা যেমন অরূপ রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনকি বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তার ছবি দেখা গেছে। তাকে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের কর্মসূচিতেও দেখা গিয়েছিল।

এতেই প্রশ্ন উঠেছে, শ্বেতা কি শাসকদলের সঙ্গে তার যোগসূত্রকে ব্যবহার করে বেআইনি কাজকর্ম চালাত? তার পিছনে কি সত্যিই শাসকদলের বড় মাথাদের হাত রয়েছে? নাকি এই সব ছবিকে সে কেবল বেআইনি ব্যবসা চালানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত?

রাজনৈতিক মহলে তরজা:
এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী অরূপ রায়কে শ্বেতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। হাত নেড়ে তিনি বলেন, তিনি শ্বেতাকে চেনেন না। “শ্বেতা খানকে আমি চিনি না। অনেকেই প্রভাব দেখাতে নেতা-মন্ত্রীদের পাশে ছবি তোলে। যদি সে সত্যি দলে থাকে, ‘দুর্জনের ছলে’র মানুষকে বাদ দিতেই হবে,” বলেন মন্ত্রী।

তবে মন্ত্রীর এই বক্তব্যকে উড়িয়ে হাওড়ার শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদেরকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন রাজ্য বিজেপির নেতা উমেশ রাই। তিনি অভিযোগ করেছেন, “শাসক দলের বদান্যতায় শ্বেতা খান বাঁকড়া থেকে রমরমিয়ে দেহব্যবসা চালিয়েছেন। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে এই চিত্র তৃণমূলের আসল মুখ। হাওড়া জেলার তৃণমূল নেতৃত্বকে জবাবদিহি করতেই হবে। এই ধরনের অপরাধীদের সামনের সারিতে এনে তাঁরা কোন মহিলার কল্যাণ করেছেন, তার উত্তর দিতে হবে।”

শ্বেতা খান এবং তার ছেলের খোঁজ এখনো মেলেনি। পুলিশি তদন্ত যত এগোবে, এই পর্ন-কাণ্ডের আরও গভীরে থাকা অন্ধকার দিকগুলি ততই উন্মোচিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy