৭১-এর যুদ্ধে লড়েছিলেন, ৭৫ বছর বয়সেও সেনায় যোগ দিতে প্রস্তুত, জেনেনিন ‘ক্যাপ্টেনের’ পরিচয়

জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে, ঠিক তখনই দেশসেবার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের এক বীর সেনানী। ক্যাপ্টেন অমরজিৎ কুমার, যিনি একাত্তরের যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করেছিলেন, তিনি আজ ৭৫ বছর বয়সেও দেশের জন্য কিছু করতে চান। বয়স বাড়লেও তাঁর মনের জোর এতটুকু কমেনি। এই পরিস্থিতিতে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে পুনরায় যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করে সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীকে একটি চিঠি লিখেছেন।

চিঠিতে ক্যাপ্টেন অমরজিৎ কুমার স্পষ্ট জানিয়েছেন যে তিনি দেশের যেকোনো প্রান্তে মোতায়েন হওয়ার জন্য প্রস্তুত। ১৯৭১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের যশোরের কাছে মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করে তিনি লেখেন, ‘একাত্তরের যুদ্ধ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ণায়ক। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত এবং নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।’ বর্তমান পরিস্থিতি দেখে তাঁর মনে হয়েছে যে এখনকার সংঘাত অনেক কিছুর ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে এবং এই সময়ে সেনাবাহিনীতে অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত লোকের প্রয়োজন হতে পারে। তাই দেশের সেবায় তিনি পুনরায় সেনাতে যোগ দিতে প্রস্তুত।

ক্যাপ্টেন কুমার জানান, তাঁর বয়স এখন ৭৫ হলেও তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ এবং মানসিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয়। তিনি আরও দাবি করেন যে তাঁর ব্যাচের আরও প্রায় ২৪০ জন প্রাক্তন সৈনিকও দেশসেবার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘একজন সত্যিকারের সৈনিক কখনও অবসর নেন না। তাঁর মধ্যে দেশপ্রেম সারাজীবন জীবিত থাকে।’

সেনাবাহিনীতে যোগদান করলেও তিনি কোনো বেতন বা সুযোগ-সুবিধা নেবেন না বলেও জানিয়েছেন। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য হলো দেশের জন্য অবদান রাখা। তাঁর মতে, ‘সঙ্কটের সময়ে, জাতির ডাকে সাড়া দিতে আরও অনেক প্রাক্তন সৈনিক অপেক্ষা করছেন। তাঁরা কেবল একটি ডাকের অপেক্ষায় রয়েছেন।’

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। গত ৮ রাত ধরে নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে পাকিস্তান লাগাতার গুলি চালিয়ে যাচ্ছে, যার যোগ্য জবাব দিচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে এবং সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতেও মানুষ বাঙ্কার মেরামত ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সংঘাতপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই ক্যাপ্টেন অমরজিৎ কুমারের দেশের প্রতি ভালোবাসা ও ত্যাগের এই মানসিকতা সত্যিই প্রশংসনীয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy