
শেখার বা পড়াশোনার কোনো বয়স হয় না—এই চিরন্তন সত্যটি আবারও প্রমাণ করলেন খড়দহ আদর্শপল্লীর বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী বন্দনা সরকার। নানা শারীরিক অসুস্থতা এবং জীবনের প্রতিকূলতা জয় করে তিনি স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন, যা খড়দহবাসীকে আপ্লুত করেছে।
অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অধ্যাবসায়:
চোখে ঠিকমতো দেখতে না পাওয়া, একটানা বসে থাকতে কষ্ট হওয়া, এবং স্নায়ুর সমস্যা—এমন অনেক শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই গত আট বছর ধরে পড়াশোনায় মগ্ন ছিলেন বন্দনা দেবী। একসময় স্বনামধন্য সুরকার প্রবীর সরকারের স্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যকার প্রবীর গুহর বোন হলেও, মাধ্যমিক পাশ করতে না পারার হীনমন্যতা তাঁকে সারাজীবন কুরে কুরে খেত। মেয়ের বিয়ে এবং প্রতিষ্ঠা লাভের পর তিনি যেন নতুন করে বাঁচার তাগিদ খুঁজে পান পড়াশোনার মধ্যে।
জীবনের এক কঠিন সময় তিনি পরিবারকে সামলাতে বিভিন্ন অফিস ও স্কুলে শাড়ি বিক্রি করেছেন, ব্যাগে চানাচুর, বিস্কুট নিয়ে ঘুরেছেন। এই পরিশ্রমের মধ্যেই তিনি মেয়েকে বড় করে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপরই শুরু হয় তাঁর নতুন লড়াই।
মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষাজীবন:
শ্যামবাজারের পার্ক ইনস্টিটিউটের রবীন্দ্রমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বন্দনা দেবী একে একে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্স নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন প্রথম শ্রেণিতে। সম্প্রতি প্রকাশিত স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফলেও তিনি ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর এই সাফল্যে পরিবার এবং বন্ধুমহল উচ্ছ্বসিত।
গুরুকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা:
বেথুন স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা তথা রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শুক্লা রায় ছিলেন বন্দনা দেবীর শিক্ষক ও পথপ্রদর্শক। রেজাল্ট জানার পর গুরুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন এই বৃদ্ধা। এই ঘটনা প্রমাণ করে, লড়াই করার কোনো বয়স নেই।
সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বন্দনা সরকার জানান, তাঁর এই সাফল্যের পেছনে স্বামী এবং পরিবারের সকল সদস্যের অপরিসীম সাহায্য ও উৎসাহ ছিল। তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আশা করেন, তাঁর এই কীর্তি বহু মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।