
আবারও শিরোনামে মালদা। এবার পাঁচ লক্ষ টাকা তোলা না দেওয়ায় এক ব্যবসায়ীকে গাছে বেঁধে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল, যা ফের উসকে দিল জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন। এই ঘটনায় শুধু ব্যবসায়ী পরিবারই নয়, আতঙ্কে কাঁপছে গোটা এলাকা। প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা এবং অভিযুক্তের প্রাক্তন রাজনৈতিক যোগসূত্র নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
কালিয়াচক থানার ফতেখানি বাঙালি পাড়া এলাকার বাসিন্দা, কাপড় ব্যবসায়ী রহিম বিশ্বাসের অভিযোগ, স্থানীয় ‘ত্রাস’ হিসেবে পরিচিত জহুরুল খানের বিরুদ্ধে। রহিমের বয়ান অনুযায়ী, ২০২২ সালেও জহুরুল তাকে অপহরণ করেছিল। সে সময় পুলিশের তৎপরতায় মুর্শিদাবাদের সুতি থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হন রহিম। অভিযুক্ত জহুরুল গ্রেফতারও হয়েছিল, কিন্তু কয়েক মাস আগেই জামিনে মুক্ত হয়ে সে যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
রহিম বিশ্বাসের অভিযোগ, জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই জহুরুল তাকে অপহরণের মামলা তুলে নিতে এবং মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। গত শনিবার চরম পরিণতি ঘটে। বাড়ি ফেরার পথে রহিমকে তুলে নিয়ে গিয়ে গাছে বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেও, এরপর থেকে সপরিবারে ঘরছাড়া রহিম বিশ্বাস। তাঁরা মালদা জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন ন্যায়বিচারের আশায়।
এই ঘটনায় মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুন্ডু প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সাফ জানিয়েছেন, “পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করব যাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আর পুলিশ যদি ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমরা লিখিত আকারে মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাব।”
ঘটনার পর থেকেই জহুরুল খানের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। জানা গেছে, একসময় জহুরুল খান তৃণমূলের একজন দাপুটে নেতা ছিল। জেলার একাধিক বিধায়ক এবং প্রভাবশালী নেতৃত্বের সঙ্গে তার ছবিও ছড়িয়ে রয়েছে। যদিও সমাজবিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ায় তৃণমূল দল তাকে বহিষ্কার করেছে বলে দাবি। তবে এই বহিষ্কারের পরেও কেন সে এত প্রভাবশালী, এবং কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পুলিশ গড়িমসি করছে, সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
এই সুযোগে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। দক্ষিণ মালদা জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ী সরাসরি শাসকদলকে দায়ী করে বলেন, “দুষ্কৃতীরা তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকে, তাই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে না। স্বাভাবিকভাবেই তারা জেলাজুড়ে দুষ্কৃতীমূলক কাজকর্ম অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে।”
অন্যদিকে, জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র আশিস কুণ্ডু আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, “সমাজবিরোধীদের আমরা প্রশ্রয় দিই না। অভিযোগ হয়েছে, নিশ্চয়ই ব্যবস্থা হবে।”
কিন্তু প্রশ্ন হল, ব্যবস্থা কবে হবে? একজন ব্যবসায়ী যেখানে প্রকাশ্যে মারধরের শিকার হয়ে প্রাণভয়ে ঘরছাড়া, সেখানে প্রশাসনের ‘ব্যবস্থা হবে’ আশ্বাস কতটা কার্যকরী, তা নিয়ে সন্দিহান সাধারণ মানুষ। জহুরুল খানের মতো ‘প্রাক্তন’ রাজনৈতিক নেতার দাপট এবং তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে শিথিলতা – মালদার এই ঘটনা কি ‘জঙ্গলরাজ’-এরই ইঙ্গিত দিচ্ছে? সময়ই বলবে এই প্রশ্নের উত্তর, তবে আপাতত ভয়ে সিঁটিয়ে আছে রহিম বিশ্বাসের পরিবার এবং আতঙ্কিত মালদার ব্যবসায়ী সমাজ।