
ইরান এবং ইজরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত এবার বিশ্বকে এক ভয়াবহ জ্বালানি সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। পরমাণু কেন্দ্র ও মিসাইল ভাণ্ডারের পর এবার ইরানের তেল পরিশোধনাগার এবং বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ফিল্ড সাউথ পার্স-এ ইজরায়েলের হামলা পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে। তেহরান সহ একাধিক এলাকার ওয়েল রিফাইনারিগুলি মিসাইল হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে এবং সাউথ পার্স গ্যাস ফিল্ডও জ্বলছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম হু হু করে বাড়ছে, যার জেরে ভারত সহ অনেক দেশেই মূল্যবৃদ্ধির প্রবল আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইরানের তেল ও গ্যাস উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি:
জানা গেছে, তেহরানে ইজরায়েলের হামলায় প্রায় ৩০০ মিলিয়ন (৩০ কোটি) লিটার তেল নষ্ট হয়ে গেছে। এই বিপুল পরিমাণ তেল নষ্ট হওয়ায় ইরান থেকে ভারত সহ বিশ্বের নানা প্রান্তে তেল সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
অন্যদিকে, সাউথ পার্স গ্যাস ফিল্ডে হামলার পর ইরান গ্যাস উৎপাদন আংশিক বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। এর জেরে দৈনিক ১২ মিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস উৎপাদনে ঘাটতি দেখা যাবে। ইরান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গ্যাস উৎপাদক এবং বিশ্বের বার্ষিক চাহিদার প্রায় ৬.৫ শতাংশই পূরণ করে। এই ঘাটতি বিশ্বব্যাপী গ্যাসের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।
ইজরায়েলেও পাল্টা আঘাত:
প্রত্য়াঘাতে ইজরায়েলের তেলের ভাণ্ডারেও আক্রমণ করেছে ইরান। সেখানেও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ লিটার তেল নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। এই পাল্টা আক্রমণ সংঘাতকে আরও তীব্র করেছে।
ভারতের ওপর প্রভাবের আশঙ্কা:
মধ্যপ্রাচ্যের উপর বিশ্বের একটি বড় অংশ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য নির্ভরশীল, এবং ভারত তার মধ্যে অন্যতম। দেশের মোট তেলের চাহিদার ৯০ শতাংশ এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ৭০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যার একটি বড় অংশ আসে ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে।
যুদ্ধ আবহে ইতিমধ্যেই অপরিশোধিত তেলের দাম চড়তে শুরু করেছে। একদিনেই ক্রুড ওয়েলের দাম ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আগে যেখানে ব্যারেল প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ ডলার খরচ পড়ত, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮.৫০ ডলারে, যা জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। ব্রেন্ট ওয়েলের দামও ১২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই সংঘাত যদি এক সপ্তাহও চলে, তবে তেলের দাম ব্যারেল পিছু ১০০ ডলারে পৌঁছতে পারে। সেক্ষেত্রে ভারত সহ একাধিক দেশেই তেল ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে পারে। এমনকি, যদি এখনই যুদ্ধ না থামে, তবে দেশে পেট্রোল-ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ২০০ টাকা বা তার বেশিও হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনটা হলে চরম সমস্যায় পড়বে মধ্যবিত্তরা। জ্বালানির দাম বাড়লে, আনুষঙ্গিক সবকিছুরই দাম বাড়বে, যার ফলে শাক-সবজি থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী অগ্নিমূল্য হতে পারে।
যদিও, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী জানিয়েছেন যে ভারতে পর্যাপ্ত তেল ও গ্যাস মজুত রয়েছে এবং ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধের আঁচ সেভাবে ভারতে পড়বে না। তবে এই চলমান সংঘাত বিশ্ব অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।