
মেঘালয়ের শান্ত পাহাড়ে রাজা রঘুবংশীর হানিমুন পরিণত হয়েছিল এক লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞে। এই চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এক ভয়ঙ্কর চিত্র: রাজা রঘুবংশীকে খুনের ছক কষা হয়েছিল বিয়ের পাঁচ দিন পর থেকেই, এমনকি এনগেজমেন্টের সময় থেকেই এর প্রস্তুতি চলছিল। পুলিশের দাবি, স্ত্রী সোনম এবং তার প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা মিলে এই হত্যাকাণ্ডকে ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ মে রাজা ও সোনমের বিয়ে হয়, কিন্তু তাদের এনগেজমেন্ট বা পাকা দেখা হয়েছিল ১১ ফেব্রুয়ারি। এরপর থেকেই রাজা রঘুবংশীকে খুনের ছক কষা শুরু হয়। মেঘালয় পুলিশের এক কর্তার দাবি, জেরায় রাজ কুশওয়াহা জানিয়েছে যে, সোনম তাকে বলেছিল, রাজা খুন হয়ে গেলে সে বিধবা হয়ে যাবে। তখন রাজকে বিয়ে করতে তার কোনো অসুবিধা হবে না। এমনকি, নিজের বিধবা মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে রাজি হলে সোনমের বাবা দেবী সিংও বড় একটা আপত্তি করবেন না—এমন কথাও রাজকে বোঝানো হয়।
বিয়ের মাত্র পাঁচ দিন পর, ১৬ মে, রাজাকে খুনের চূড়ান্ত ছক কষা হয়। এর মধ্যেই মেঘালয়ে হানিমুনে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রাজাকে রাজি করিয়ে নেয় সোনম।
রাজা ও সোনম শিলংয়ের উদ্দেশে রওনা হতেই তিন ভাড়াটে খুনিও পরিকল্পনা মতো গুয়াহাটি রওনা হয়ে যায়। গুয়াহাটিতে পৌঁছে তারা অনলাইনে একটি ছোট কুড়ুল বা দা কিনে নেয়। এই কুড়ুল দিয়েই রাজাকে খুন করা হয়েছিল। সোনম ও রাজা যখন শিলংয়ে পৌঁছায়, তখন ওই তিন খুনিও শিলংয়ে পৌঁছায় এবং সোনম ও রাজা যে হোটেলে উঠেছিল, তার থেকে এক কিলোমিটার দূরের একটি হোটেলে থাকতে শুরু করে।
মেঘালয় পুলিশের তদন্তকারীদের একটি সূত্রের খবর, ফটোশুটের অছিলায় সোনম তার স্বামী রাজাকে নিয়ে যায় কোরসা এলাকায়। সেখানে গিয়ে পাহাড়ি পথে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়ার ভান করে সোনম। সে রাজার পিছনে ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকে। সেই সময় তিন ভাড়াটে খুনিও রাজার পাশে পাশে হাঁটছিল।
নাটকীয় মোড় নেয় যখন একসময় তিন ভাড়াটে খুনিই পাহাড়ের চড়াইয়ে উঠতে উঠতে সত্যিই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তারা সোনমকে বলে, তাদের ছেড়ে দিতে এবং তারা রাজাকে খুন করতে পারবে না।
কিন্তু সোনম তখন কী করেছিল? মেঘালয় পুলিশের দাবি, রাজার টাকার ব্যাগ ছিল সোনমের কাছে। সোনম রাজার ব্যাগ থেকে তখনই ১৫ হাজার টাকা বের করে তিনজনকে দেয়। সোনম তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, খুন তাদেরই করতে হবে। সে প্রতিশ্রুতি দেয়, খুনের পরে সে তাদের আরও ২০ লক্ষ টাকা দেবে। এই বিশাল অঙ্কের লোভেই খুনিরা পুনরায় রাজি হয়।
পুলিশ কীভাবে এই চাঞ্চল্যকর খুনের কিনারা করল? গত শনিবার মেঘালয় পুলিশের হাতে একটি সিসিটিভির ফুটেজ আসে। তাতে দেখা যায়, রাজার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কারও সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছে সোনম। ওই ফুটেজের সময় ও তারিখ দেখে সোনমের ফোনের কল ডিটেইলস জোগাড় করে পুলিশ। দেখা যায়, সোনম ইন্দোরে কাউকে ফোন করছে। এরপরই পুলিশকে বেশি বেগ পেতে হয়নি। কল ডিটেইলস এবং অন্যান্য সূত্র ধরে সোনম ও রাজের যোগসাজশ এবং খুনের ছক পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
এই চাঞ্চল্যকর হত্যা রহস্য উন্মোচনের পর দেশের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রেম এবং বিশ্বাসঘাতকতার এই কাহিনি যেন গল্পের চেয়েও ভয়াবহ।