
রাজ্যজুড়ে স্মার্ট মিটার বসানো নিয়ে এক নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন যে, স্মার্ট মিটারের নামে রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের উপর “আর্থিক বোঝা” চাপাতে চাইছে এবং এই প্রক্রিয়ার পেছনে তৃণমূল কংগ্রেসের “২০ শতাংশ কমিশন” যোগ রয়েছে। তাঁর এই বিস্ফোরক মন্তব্য বিদ্যুৎ দফতর এবং শাসক দলের বিরুদ্ধে এক গুরুতর অভিযোগের জন্ম দিয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারীর স্পষ্ট দাবি, স্মার্ট মিটার স্থাপন বাধ্যতামূলক নয়, বরং ঐচ্ছিক। অথচ, বিভিন্ন এলাকায় জোর করে এই মিটার বসানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, “জোর করে স্মার্ট মিটার লাগানো হচ্ছে। বারাসত, নিউটাউন, ব্যারাকপুরের বিভিন্ন এলাকা, পানিহাটি, বরানগরে শুরু করেছে। এটা বাধ্যতামূলক নয়, অপশনাল। মনে করলে লাগাবেন স্মার্ট মিটার, না হলে লাগাবেন না।” এরপরই তিনি জনতাকে আহ্বান জানান, যদি কেউ স্মার্ট মিটার না চান, তবে এজেন্সি কর্মীদের “ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দিন।”
বিরোধী দলনেতার অভিযোগের তীর এখানেই থামেনি। তিনি সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলে বলেন, “এই এজেন্সিক থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন নেয় তৃণমূল।” তাঁর এই গুরুতর অভিযোগের প্রমাণস্বরূপ, তিনি আরও চাঞ্চল্যকর দাবি করেন যে, স্মার্ট মিটার লাগালে “১২ মাসের বদলে ১৩ মাসের বিল আসবে।” এই মন্তব্যের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারী আরও জানান যে, ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে স্মার্ট মিটার নিয়ে রাজ্যবাসীকে সচেতন করা হবে। তিনি বলেন, “বিজেপির পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচার, আলোচনা, প্রতিবাদ, প্রয়োজনে প্রতিরোধ করা হবে।” এর মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দিলেন যে, এই ইস্যুটিকে বিজেপি একটি জনস্বার্থের বিষয় হিসেবে তুলে ধরতে প্রস্তুত।
অন্যদিকে, বিদ্যুৎ চুরির অর্থাৎ হুকিং প্রসঙ্গেও তিনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন। তাঁর অভিযোগ, একদিকে সরকার বিদ্যুতের বিল বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে হুকিং বন্ধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, “বিদ্যুতের বিল বাড়িয়েছে সরকার। মোমিনপুর, একবালপুর, গুলশান কলোনির মতো ১০০ জায়গার নাম বলে দেব, হুকিংয়ে চলে। বিল দিতে হয় না। ব্যাপক হুকিং হয়।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাছে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, “হুকিংগুলো কাটুন।”
শুভেন্দু অধিকারীর এই অভিযোগগুলি রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ নীতির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। স্মার্ট মিটারের প্রয়োজনীয়তা, এর ব্যয়ভার এবং এর পেছনে কোনো দুর্নীতির ছোঁয়া আছে কিনা, তা নিয়ে এখন রাজনৈতিক মহলে জোরদার আলোচনা শুরু হয়েছে। শাসক দলের পক্ষ থেকে এখনও এই অভিযোগের কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব আসেনি। তবে আসন্ন সময়ে এই বিতর্কের পারদ আরও চড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।