
এই মাসের গোড়ার দিকেই ইরানের শীর্ষ সামরিক ও নিরাপত্তা আধিকারিকদের উদ্দেশে সরাসরি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলে দাবি উঠেছে। সেই হুমকি যে শুধু কথার কথা নয়, বরং ইজরায়েলের গোপন সামরিক অপারেশন “Rising Lion”-এরই অংশ ছিল—এমনটাই প্রকাশ্যে এনেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম The Washington Post।
এই হুমকি শুধু কথোপকথনেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ফাঁস হওয়া একাধিক অডিও ক্লিপে শোনা যাচ্ছে, ইজরায়েলি গোয়েন্দা বিভাগের বেশ কয়েকজন এজেন্ট ফারসি ভাষায় ইরানের সেনা ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের ফোন করে ১২ ঘণ্টার সময়সীমা দেন—স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দেশ ছাড়তে হবে, না হলে “তালিকায় পরবর্তী” হয়ে উঠবেন তাঁরা।
এক অডিও ক্লিপে শোনা যায়, এক প্রবীণ ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (IRGC) জেনারেলকে বলা হচ্ছে:“আপনার হাতে মাত্র ১২ ঘণ্টা। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালান। আপনি এখন আমাদের হিটলিস্টে। আমরা আপনার গলার শিরার থেকেও কাছাকাছি রয়েছি… আল্লাহ আপনাকে হয়ত বাঁচাতে পারবেন, আমরা নয়।”
এজেন্ট আরও দাবি করেন, তাঁরা এমন একটি দেশ থেকে ফোন করছেন যেখানে কিছুক্ষণ আগেই আইআরজিসির শীর্ষ আধিকারিকরা হত্যা হয়েছেন—যেমন হোসেইন সালামি, মহম্মদ বাঘেরি বা আলি শামখানি। যদিও ইরানের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে জানানো হয়, শামখানি সেই হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছেন।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থেকে জানা যায়, এই হুমকির সঙ্গে ভিডিও বার্তা রেকর্ড করার নির্দেশও দেওয়া হয়, যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ইরানের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেন এবং সেই ভিডিও টেলিগ্রামে পাঠানো হয়। সেই ভিডিও আদৌ তৈরি হয়েছিল কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বে অস্থিরতা সৃষ্টি করা এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সম্ভাবনাকেও দমন করা। ইজরায়েলি সূত্র জানায়, মধ্য ও উচ্চ পর্যায়ের কমান্ডারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। শুধু ফোন নয়, হুমকির বার্তা পাঠানো হয় ঘরে লেখা নোট, এমনকি স্ত্রী বা স্বামীর মাধ্যমেও।
প্রসঙ্গত, ১৩ জুন ইজরায়েলের একাধিক হামলার সময়ই এই অপারেশন শুরু হয়, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিকে ধ্বংস করা। সেই সামরিক পদক্ষেপের অংশ হিসাবেই ইরানিদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল করে তোলার চেষ্টা করে ইজরায়েলি গোয়েন্দা বিভাগ।
এই অপারেশনের সামগ্রিক উদ্দেশ্য ছিল শুধু সামরিক পরিকাঠামো নয়, মনোবল ও নেতৃত্ব কাঠামোকেও লক্ষ্যবস্তু করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের কার্যকলাপ শুধু দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ায় না, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তারও ঝুঁকি তৈরি করে।