১১ বছর ধরে ভারতীয় নাগরিক সেজে বসবাস, অবশেষে পুলিশের জালে বাংলাদেশি জীবন

ঠাকুরগাঁও জেলার বকুয়া গ্রামের বাসিন্দা রূপকচন্দ্র সেন (২৬)। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল সে। এরপর এক ব্যক্তির ‘বাবা’ পরিচয়ে জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিব্যি ভারতীয় সেজে বসবাস করছিল। কিন্তু তার এই নকল জীবন শেষ হলো হলদিবাড়ি থানার পুলিশের হাতে। রূপকের সঙ্গে তার পরিচয় দেওয়া ‘পাতানো বাবা’ উমেশচন্দ্র সেনকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে জাল নথি এবং ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা রুজু করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১১ বছর আগে, ১৫ বছর বয়সে রূপক রাতের অন্ধকারে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের দেওয়ানগঞ্জ পঞ্চায়েতের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় তার মেসো উমেশচন্দ্র সেনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানেই সে নিজের আসল পরিচয় বদলে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড তৈরি করে নেয়। এমনকি, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সে ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ। পেশায় কাঠমিস্ত্রি রূপক এই দীর্ঘ ১১ বছরে একবারও বাংলাদেশে ফিরে যায়নি। নিজেকে ভারতের নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সে মরিয়া হয়ে উঠেছিল।

বুধবার সকালে শিলিগুড়ি থেকে উমেশচন্দ্র সেনের বাড়ি ফেরার পর পুলিশ রূপককে আটক করে। কারণ সে ওই বাড়িতে আবাস যোজনার ঘরের কাঠের কাজ করছিল। এরপর রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় পুরো হলদিবাড়ি ব্লকে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে একজন বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের আধার ও ভোটার কার্ড তৈরি করতে পারল? পুলিশ এই বিষয়ে গভীর তদন্তে নেমেছে।

স্থানীয়দের দাবি, উমেশচন্দ্র সেনের আসলে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। কিন্তু ভোটার তালিকায় দেখা যায়, তার দু’জন ছেলে – উমাপদ এবং রূপক! এই গুরুতর গড়মিল কীভাবে স্থানীয় প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে গেল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

উমেশচন্দ্র সেন পুলিশের কাছে দাবি করেছেন যে, রূপক তাকে “বাবা” বলে ডাকত, তাই তিনিও তাকে দত্তকপুত্র হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। তার কোনো বেআইনি উদ্দেশ্য ছিল না। তবে পুলিশ এই পুরো বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ বলে জানিয়েছে। মেখলিগঞ্জ মহকুমা আদালতের বিচারক রূপকের ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনায় সীমান্ত সুরক্ষা এবং পরিচয়পত্র তৈরির প্রক্রিয়ায় কতটা ফাঁকফোকর রয়েছে, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy