
বর্ষার আগমনে পাহাড়ে শুরু হয়েছে প্রাকৃতিক তাণ্ডব। অবিরাম বৃষ্টির জেরে ধস নেমে কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের লাইফলাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। মেল্লি ও লিখুভীরের কাছে মামখোলায় দুটি পৃথক স্থানে ধস নামায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে, যার ফলে আটকে পড়েছেন শত শত পর্যটক। উত্তরবঙ্গ থেকে সিকিমের প্রবেশপথে এই আকস্মিক বাধার কারণে বিকল্প পথের সন্ধানে নেমেছেন পর্যটক ও স্থানীয়রা।
কালিম্পংয়ের তিস্তা বাজারের কাছে মেল্লি ও লিখুভীরের সংলগ্ন মামখোলায় পাহাড় থেকে বিশালাকার পাথর এবং মাটি গড়িয়ে জাতীয় সড়কের উপর পড়েছে। সকালে একটি ট্রাক ধসের কবলে পড়ে উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এর জেরে বাংলা ও সিকিমের মধ্যে সড়কপথে যোগাযোগ এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভারী যান চলাচলে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যদিও ধস সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার কাজ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু করেছে প্রশাসন, তবে অতিরিক্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় নতুন করে ধস নামার আশঙ্কা কাজ করছে, যা কাজ শেষ হতে আরও সময় নিতে পারে।
পর্যটকদের দুর্ভোগ: আটকা পড়া ও বিকল্পের খোঁজ
এই আকস্মিক ধসের কারণে বহু পর্যটক আটকা পড়েছেন। সিকিমগামী এবং সিকিম থেকে ফেরা উভয় যাত্রীরাই চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাদের অনেকেই দীর্ঘক্ষণ ধরে যানজটে আটকে রয়েছেন এবং খাবারের জলের সংকটে ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে তারা দ্রুত বিকল্প পথের সন্ধান করছেন।
সিকিম থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য কিছু বিকল্প রাস্তা:
পর্যটকদের সুবিধার জন্য বেশ কিছু বিকল্প পথের সন্ধান দেওয়া হচ্ছে, যদিও এগুলি দীর্ঘ এবং সময়সাপেক্ষ:
১. সেবক হয়ে ডুয়ার্স: শিলিগুড়ি থেকে ঘেরক হয়ে ডুয়ার্সের রাস্তা ধরে যাওয়া যেতে পারে। এই পথটি মনোরম পাহাড়ি দৃশ্য দিয়ে ঘেরা, যা ভ্রমণকারীদের জন্য এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দিতে পারে।
২. আলগাড়া-লাভার রাস্তা: শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত এটি একটি পরিচিত বিকল্প পথ, যা প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।
৩. পাসবু হয়ে সিকিম: দার্জিলিং হয়ে কালিম্পং, পাসবু এবং তারপর সিকিমে পৌঁছানো যায়। এই পথটি তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ এবং বেশি সময় নেয়।
ভবিষ্যতের পথ: ৭৯৪ জাতীয় সড়ক
বর্তমানে ৭৯৪ জাতীয় সড়ক নামে শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যাওয়ার জন্য একটি নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। এই রাস্তাটি সম্পূর্ণ হলে সিকিম থেকে শিলিগুড়ি এবং শিলিগুড়ি থেকে সিকিম যাতায়াত আরও সহজ এবং দ্রুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে, স্থানীয় পরিবহন যেমন ট্যাক্সি বা অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে উল্লিখিত বিকল্প পথগুলো ব্যবহার করে সিকিম থেকে শিলিগুড়ি যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ধস পুরোপুরি না সরা পর্যন্ত ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যাতায়াত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।