“হানিমুনে ছেলেকে জোর করে ১০ লাখ টাকার গয়না পরতে বাধ্য করে সোনম”-বিস্ফোরক দাবি পরিবারের

মেঘালয়ের শান্ত পাহাড়ি পরিবেশে এক নবদম্পতির হানিমুন পরিণত হয়েছে এক লোমহর্ষক হত্যা রহস্যে, যা নিয়ে তোলপাড় ভারতজুড়ে। নিহত রাজা রঘুবংশীর মা ঊমা দেবী পুত্রবধূ সোনমের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনেছেন, যা মামলার মোড়কে আরও জটিল করে তুলেছে। তার দাবি, বিয়ের পর তড়িঘড়ি হানিমুনে যাওয়ার পুরো পরিকল্পনা সোনমেরই ছিল, এমনকি হোটেল ও টিকিট বুকিংও তিনিই করেছিলেন।

ইন্দোরের ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশী এবং সোনমের এই করুণ পরিণতি যেন কেউই ভাবতে পারেননি। মেঘালয়ে নিখোঁজ হওয়ার ১১ দিনের মাথায় রাজা রঘুবংশীকে খুন করা হয় বলে পুলিশের সন্দেহ। কিন্তু স্ত্রী সোনম গেলেন কোথায়? তার নিখোঁজ হওয়া নিয়ে যখন সবাই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন এবং কোনো সাংঘাতিক অঘটনের আশঙ্কা করছিলেন, তখনই উত্তরপ্রদেশ থেকে খোঁজ মিলল সোনমের। আর এই খবরই ঘুরিয়ে দিল গোটা ঘটনার মোড়। স্বামী রাজা রঘুবংশীকে খুনের অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করল খোদ স্ত্রী সোনমকে।

পরিবারের হতবাক ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
গত কয়েকদিন ধরে যে সোনমকে নিয়ে রাজার পরিবার দুশ্চিন্তায় ছিলেন, তিনি যে খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী, তা জেনে তারা হতভম্ব। পুলিশি তদন্তে উঠে আসা তথ্য শুনে রাজা রঘুবংশীর মা ঊমা দেবী ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, “যদি ও এই খুনে যুক্ত থাকে, তাহলে ওকে ফাঁসিকাঁঠে ঝোলানো হোক।” পুত্রবধূর এমন আচরণ তিনি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি বলেন, “ওর ব্যবহার খুব আন্তরিক ছিল। আমাকে মা বলে জড়িয়ে ধরত।”

সোনমের পরিকল্পনার ইঙ্গিত: হানিমুন ও গয়না
মৃত যুবকের মা ঊমার দাবি, হানিমুনে যাওয়ার জন্য সোনম এতটাই উৎসাহী ছিল যে, নিজেই ট্রেন থেকে হোটেল বুকিং পর্যন্ত সব কিছু করেছিল। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, ফেরার কোনো টিকিট কাটা হয়নি। এই প্রশ্ন করায় সোনম পরিবারকে জানিয়েছিল যে, তারা গিয়ে আরও কিছুদিন সেখানে থাকতে পারেন এবং পরে ফেরার তারিখ ঠিক করবেন। তবে বহুবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও সোনম ট্রিপ নিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য পরিবারকে জানায়নি।

এখানেই শেষ নয়, রাজার মা জানিয়েছেন, মেঘালয়ে যাওয়ার সময় স্বামী রাজাকে দামি দামি গয়না পরে যাওয়ার জন্য জোর করেন সোনম। নববধূর আবদারেই প্রায় ১০ লাখ টাকারও বেশি দামি গয়না (সোনার চেন, হিরের আংটি, দামি ঘড়ি, সোনার ব্রেসলেট-সহ আরও অনেক কিছু) পরে মেঘালয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন রাজা। এই তথ্য শোনার পর টাকাপয়সা ও গয়না হাতানোও সোনমের পরিকল্পনার অংশ ছিল কিনা, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী দল।

সোনমের খোঁজ ও গ্রেপ্তার: ‘আত্মসমর্পণ নয়, আমরাই খবর দিয়েছি’
গত ১৭ দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর রবিবার রাতে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর থেকে পাওয়া গেছে সোনমকে। রাজা রঘুবংশীর দাদার দাবি, “মোটেও আত্মসমর্পণ করেননি সোনম। ওঁর সুরক্ষার কথা ভেবে আমরাই পুলিশকে জানিয়েছিলাম।” তার দাদা এও জানিয়েছেন, “সাংঘাতিক ভয় পেয়েছিল সোনম বলে মনে হচ্ছিল।” যদিও সোনমের গ্রেপ্তারিতে রাজার দাদাও হতবাক। তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত যা শুনতে পাচ্ছি ও উত্তরপ্রদেশে ছিল। খুনে অভিযুক্ত বাকিরা মধ্যপ্রদেশ থেকে ধরা পড়েছে। এর মধ্যে যোগসূত্র কোথায়? যা শোনা যাচ্ছে, সবই নাকি সোনম নিজেই খুনের কথা স্বীকার করেছে।”

মেঘালয়ে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজের ঘটনা এখন বদলে গেছে এক শিউরে ওঠা খুনে। সেই রহস্যের জট খুলতে রাজা রঘুবংশীর খুনে অভিযুক্ত তার স্ত্রী সোনম, সোনমের প্রেমিক রাজ-সহ ধৃত পাঁচজনকে জেরা করছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসা তথ্য শুনে রাজা রঘুবংশীর মা সোনম ও বাকি অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ভারতীয় সমাজে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy