
মেঘালয়ের চাঞ্চল্যকর হানিমুন হত্যাকাণ্ডের রহস্য অবশেষে উন্মোচিত হলো। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর স্ত্রী সোনম রঘুবংশী অবশেষে স্বীকার করেছেন, তিনিই তাঁর স্বামী রাজাকে খুনের ছক কষেছিলেন। বুধবার মেঘালয় পুলিশ সোনম এবং তাঁর প্রেমিক রাজ কুশওয়াহাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করলে, সোনম কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং সমস্ত দোষ কবুল করে।
তদন্তকারী দলের কাছে রাজ এবং সোনমের কাছে পালানোর কোনো পথ খোলা ছিল না। ৪২টি জায়গার CCTV ফুটেজ, রক্তাক্ত জ্যাকেট এবং সোনমের রক্তমাখা রেনকোট – এই সমস্ত জোরদার তথ্যপ্রমাণ সোনমকে পুরোপুরি কোণঠাসা করে দেয়। ফলে, SIT আধিকারিকদের সামনে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং স্বীকার করে নেয় যে, তিন সুপারি কিলার আকাশ রাজপুত, বিশাল ওরফে ভিক্কি ছাকুর এবং আনন্দ কুর্মী-র সঙ্গে হাত মিলিয়েই সে রাজাকে খুন করিয়েছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হানিমুনে গিয়ে মেঘালয়ের সাইট সিইং করার নাম করে সোনম তাঁর স্বামী রাজাকে সোহরা এলাকার এক নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকেই সে সুপারি কিলারদের কাছে রাজের অবস্থান পাঠায়। হত্যার দিন সোনম তাঁর শাশুড়িকে আপদা একাদশীর ব্রত রাখার মিথ্যা খবর দিয়েছিল, যাতে সন্দেহ না হয়। হোটেলের রেকর্ড থেকে পরে জানা যায়, সে সেদিন খাবার খেয়েছিল, যা তার মিথ্যাচার প্রমাণ করে।
হত্যার পর সোনম রাজার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ‘সাত জন্মের সঙ্গ আমাদের’ লিখে একটি পোস্টও করেছিল। এর মাধ্যমে সে সকলকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল, যাতে কেউ তার উপর সন্দেহ না করে। মেঘালয় পুলিশ জানিয়েছে, সোনমের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজাকে জীবন থেকে সরিয়ে ফেলা, যাতে সে তাঁর প্রেমিক রাজকে বিয়ে করে নতুন করে সংসার পাততে পারে।
রাজা রঘুবংশীর ভাই সচিন এবং বাবা অশোক রঘুবংশী সোনমের ফাঁসির সাজার দাবি করেছেন। সোনমের নিজের ভাই গোবিন্দও হত্যাকারীদের ফাঁসির সাজা চেয়েছেন। তবে তিনি দাবি করেছেন যে, সোনমের এই ষড়যন্ত্রমূলক ভূমিকা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণাই ছিল না।
এই ঘটনা পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা এবং অন্ধ প্রেমের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরল। এখন দেখার পালা, আইন কীভাবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে।