
মেঘালয়ের হানিমুন হত্যাকাণ্ড এখন এক ভয়াবহ রহস্য উন্মোচনে পরিণত হয়েছে। স্বামী রাজা রঘুবংশীকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সোনম রঘুবংশী সম্পর্কে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। পুলিশের সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, বিয়ের মাত্র তিন দিনের মাথাতেই সোনম তার প্রেমিকের সঙ্গে স্বামীকে খুনের ষড়যন্ত্র শুরু করে দিয়েছিল।
তদন্তকারীদের হাতে এসেছে সোনমের প্রেমিক রাজ কুশওয়াহার সঙ্গে তার কথোপকথনের চ্যাট। এই চ্যাটে সোনম লিখেছে, তার স্বামী যখন ঘনিষ্ঠ হওয়ার বা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করত, তা তার একদম পছন্দ হতো না। বিয়ের পর সে কোনোভাবেই স্বামীর কাছে যেতে চাইত না, এমনটাই প্রেমিক রাজকে জানিয়েছিল সোনম। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হলো, এই চ্যাটেই সোনম সরাসরি স্বামীকে খুন করার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছে। বিয়ের মাত্র তিন দিনের মাথায় রাজকে পাঠানো এই চ্যাটেই রাজা রঘুবংশীকে খুনের চক্রান্তের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে, প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা সম্পর্কেও চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে। খুনে অভিযুক্ত এই ব্যক্তি নাকি সোনমের স্বামীর শেষকৃত্যেও আগাগোড়া হাজির ছিল। খুনের পরও গা-ঢাকা না দিয়ে, বরং দুই পরিবারের কাছাকাছিই ছিল সে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এই অস্বাভাবিক আচরণ রাজের দিকে তদন্তকারীদের সন্দেহ আরও গভীর করেছে।
প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রেমিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মেঘালয়ে হানিমুনে গিয়ে স্বামী রাজা রঘুবংশীকে হত্যার ছক কষেছিল সোনম। এই কাজে ভাড়াটে খুনিও ব্যবহার করা হয়েছিল। রবিবার সোনমের খোঁজ মেলার পরই একে একে পুলিশের জালে সোনমের প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা থেকে খুনে অভিযুক্ত বাকিরাও ধরা পড়েছে।
রাজা রঘুবংশীর খুনের অভিযোগে সোনমের গ্রেপ্তার হওয়া তার শ্বশুরবাড়ির লোকের কাছে ছিল চরম আঘাত। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। নববধু সোনমের পুরোনো প্রেমের সম্পর্ক এবং প্রেমিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে খুনের পরিকল্পনার তথ্য গোটা রঘুবংশী পরিবারকে নাড়িয়ে দিয়েছে। রাজ কুশওয়াহার নাম ও ছবি দেখার পর রাজা রঘুবংশীর মা ও বোন দাবি করেছেন, রাজার শেষকৃত্যেও রাজ উপস্থিত ছিলেন।
ইন্দোরের ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশীর সঙ্গে ১১ মে সোনমের বিয়ে হয়। এরপর ২০ মে এই নবদম্পতি মেঘালয়ে হানিমুনে যান। ২৩ তারিখ থেকে আচমকাই তাদের খোঁজ মিলছিল না। বিশেষ তদন্তকারী দল দম্পতির খোঁজে অভিযানে নামলে ২ জুন ওয়েইসাওডং জলপ্রপাতের কাছে একটি গিরিখাতে মেলে রাজার ক্ষতবিক্ষত দেহ। ৪ জুন ময়নাতদন্তের পর রাজার মৃতদেহ মেঘালয় থেকে ইন্দোরে পাঠানো হয়। তখনও সোনমের খোঁজ মেলেনি। অবশেষে ১৭ দিন পর রবিবার উত্তরপ্রদেশের গাজ়িপুর থেকে নববধু সোনমের খোঁজ মেলে। তখনই জানা যায়, এই চাঞ্চল্যকর কেসে সে ‘ভিক্টিম’ নয়, বরং নিজেই ‘ভিলেন’।
সোনমের এই ভয়ংকর পরিকল্পনা এবং রাজের অস্বাভাবিক আচরণ, এই পুরো ঘটনাটি ভারতীয় সমাজে গভীর চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই যেন এই ‘হানিমুন হরর’-এর নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে।