‘হঠাৎ বিজেপি’র জন্ম নিতে হবে!’- দিলীপ ঘোষের নিশানায় কে? সৌজন্য না কি পুরনো ক্ষোভ?

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে পারদ ক্রমশ চড়ছে। এই আবহে নতুন করে বিস্ফোরক মন্তব্য করে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তার সাম্প্রতিক উক্তি – ‘যাঁরা তৃণমূল এবং সিপিএম থেকে বিজেপিতে এসেছেন, তাঁরা ‘সৌজন্য’ জানেন না’ – রাজ্য রাজনীতিতে জোর জল্পনার জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের আসল নিশানা কি রাজ্য বিজেপির বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী?

‘হঠাৎ বিজেপি’ বনাম পুরনো সৈনিক: সৌজন্যের পাঠ
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। দিলীপ ঘোষের দফতর থেকে সেই শুভেচ্ছাবার্তার স্ক্রিনশট সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লেখা হয়, “বিজেপি-র সৌজন্য বুঝতে ‘হঠাৎ বিজেপি’-র আর এক জন্ম নিতে হবে।” এই ‘হঠাৎ বিজেপি’ শব্দবন্ধটিই জল্পনা উস্কে দেয়।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষ তার মন্তব্যে কোনো রাখঢাক করেননি। তিনি বলেন, “বাংলার যে রাজনীতি, সিপিএম, তৃণমূলে থেকে রোগটা আমাদের মধ্যেও এসে গিয়েছে যে, বিরোধী মানেই শত্রু। কাল শত্রু, দলে এসে গেলে আজ মিত্র। আবার চলে গেলে শত্রু। এই সংস্কৃতিতে তো সমাজ চলতে পারে না! আমি বলতে চেয়েছি যে, এটাই বিজেপি-র সংস্কৃতি। বিজেপি রাজনীতির জন্য শত্রু বা মিত্র হবে না। বিরোধী নেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁকে সম্মান জানানো হয়েছে।”

‘হিংসা, দুর্নীতির রাজনীতিতে অভ্যস্ত’: দিলীপের সমালোচনার মূল সুর
এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে রাজ্য বিজেপির বিরাগভাজন হয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। সেই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “সৌজন্য দেখা যাচ্ছে না, কারণ যাঁরা তৃণমূল বা সিপিএম থেকে এসেছেন, তাঁরা ওই সৌজন্যে অভ্যস্ত নন। তাঁরা হিংসা, দুর্নীতির রাজনীতিতে অভ্যস্ত। বিজেপি-র উদার রাজনীতি, বসুধৈব কুটুম্বকম বা সবকা সাথ, সবকা বিকাশ বললেও, হজম করতে পারেন না। তাই এই ধরনের সমস্যা হয় তাঁদের। বিজেপি-র নীতি কিন্তু পরিষ্কার। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দেখেই চলা উচিত বিজেপি-র। নইলে পার্থক্য থাকবে কী করে?”

দূরত্বের ইঙ্গিত নাকি সরাসরি আক্রমণ?
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যকে যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্য বিজেপিতে শুভেন্দু অধিকারী বা অন্যান্য ‘নবাগত’ নেতাদের সঙ্গে দিলীপের পুরনো কর্মীদের দূরত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন রয়েছে। এই মন্তব্য সেই গুঞ্জনকেই যেন আরও জোরালো করল।

বিজেপির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ অবশ্য এই বিষয়ে কিছুটা সতর্ক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “দিলীপবাবু সর্বভারতীয় স্তরে রাজনীতি করেছেন। তিনি রাজ্য এবং জাতীয় স্তরের নেতা ছিলেন। বিজেপি-তে বিভিন্ন দলের নেতারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সম্মতি নিয়ে এই দলে যোগ দিয়েছেন এবং দলের রীতিনীতি মেনেই কাজ করছেন। কোথাও শৃঙ্খলা বা সৌজন্যের বিষয়ে রীতিনীতির সঙ্গে না গেলে, অবশ্যই কথা বলা হবে। তবে আমি এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু শুনিনি।”

অন্যদিকে, তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য সরাসরি আক্রমণ শানিয়েছেন। তার মতে, “দিলীপ ঘোষ যে মন্তব্য করেছেন, আমার ধারণা, তিনি শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়েই বলেছেন। তবে একথা সত্য যে, দিলীপ ঘোষ না চাইলে শুভেন্দু অধিকারী ঢুকতে পারতেন না। পাশাপাশি বসে তাঁরা মিটিংও করেছেন। আজ দিলীপ ঘোষকে ঘরের বাইরে বের করে দিয়ে তাঁর চেয়ারে গিয়ে বসেছেন শুভেন্দু। সেটা হজম করতে হচ্ছে দিলীপকে।” দেবাংশু আরও যোগ করেন, “যত ছাঁট জিনিস, ফেলে দেওয়া জঞ্জাল, সবক’টাকে জড়ো করে বিজেপি নিজের বাড়ির ফুলদানিতে সাজিয়েছেন। আর তার জন্যই এক সময়ের বাড়ির মালিক, দিলীপ ঘোষ দুর্গন্ধে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।”

দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে আরও একবার প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। আসন্ন নির্বাচনের আগে দলের ভেতরের এই বিভেদ কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy