
বিদ্যুতের বাড়তি বিল নিয়ে রাজ্যজুড়ে তীব্র অসন্তোষ এবং প্রতিবাদের মুখে অবশেষে সাধারণ উপভোক্তাদের বাড়িতে স্মার্ট মিটার (Smart Meter) বসানোর কাজ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বিদ্যুৎ দপ্তর। সরকারের এই পদক্ষেপকে জনগণের চাপের কাছে নতিস্বীকার হিসেবেই দেখছে বিরোধী মহল।
গত কয়েক মাস ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ উঠে আসছিল যে, স্মার্ট মিটার বসানোর ফলে বিদ্যুতের বিল দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়ে যাচ্ছে। বহু গ্রাহক দাবি করেছেন যে, ৫০০ টাকার বিল ১৫০০ টাকা আসছে, আবার ১০০০ টাকার বিল এসে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার টাকায়। এমনকি ব্যান্ডেলের এক গ্রাহক দাবি করেছেন, এক মাসে তাঁর বাড়িতে ১২ হাজার টাকা বিল এসেছে, যার জন্য তিনি সরাসরি স্মার্ট মিটারকেই দায়ী করেছেন।
এই বিষয়টি শুধু সামাজিক মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং রাজনীতির মঞ্চেও এটি একটি প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের অধীনস্থ বিদ্যুৎ ইউনিয়নগুলি জোর গলায় দাবি করছিল যে, রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা বেসরকারিকরণের এটি একটি পদক্ষেপ এবং জোর করে এই স্মার্ট মিটার বসানো হচ্ছে, যা উপভোক্তাদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।
যদিও বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে পরিষেবার মান আরও উন্নত হবে এবং বাড়তি বিলের পেছনে কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি নেই। তবুও, সাধারণ মানুষের মনে অসন্তোষ এবং লাগাতার প্রতিবাদের ফলেই শেষ পর্যন্ত রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তর এই মিটার বসানোতে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তর জানিয়েছে, সরকারি এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া আপাতত সাধারণ উপভোক্তাদের বাড়িতে এই স্মার্ট মিটার বসানো হবে না। বিদ্যুৎ দপ্তরের এই সিদ্ধান্তে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, “বোঝো ঠেলা!”, যার মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, অবশেষে রাজ্য সরকার জনগণের চাপে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছে।
বিদ্যুৎ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তর এবং টেলিকম টাওয়ারে সফলভাবে স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে। রাজ্যের তিন-চারটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কিছু বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ চলছিল। তবে এই পরীক্ষার পর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার ভিত্তিতে আপাতত ব্যক্তিগত বাড়িতে এই মিটার বসানোর কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে সাময়িকভাবে হলেও বিদ্যুতের বাড়তি বিল নিয়ে মানুষের উদ্বেগ কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।