স্মার্ট মিটারে বেশি বিল আসার অভিযোগ, বাংলার জেলায় জেলায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ

রাজ্যজুড়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্মার্ট মিটার স্থাপন নিয়ে চলা তীব্র ক্ষোভ, বিক্ষোভ এবং পথ অবরোধের মুখে অবশেষে নতি স্বীকার করল রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তর। সোমবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, গৃহস্থ বাড়িতে আপাতত স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ বন্ধ রাখা হচ্ছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে “কিছু অভিযোগ আসায়” এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস এবং টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ারে স্মার্ট মিটার সফলভাবে বসানো হলেও, সাধারণ গৃহস্থ গ্রাহকদের কাছ থেকে এই মিটার নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আসছিল। প্রধান অভিযোগটি হলো, স্মার্ট মিটার বসানোর পর থেকেই বিদ্যুতের খরচ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে, অর্থাৎ গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিল দিতে হচ্ছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই বিদ্যুৎ দপ্তর আপাতত মিটার স্থাপন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্মার্ট মিটার নিয়ে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ এতটাই ব্যাপক যে তা বিভিন্ন জেলায় লাগাতার আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। সোমবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বনগাঁয় জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয়রা। একই চিত্র দেখা গেছে বারাসাতেও, যেখানে অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি অ্যাসোসিয়েশন-এর সদস্য ও সাধারণ মানুষ বারাসাত সাব ডিভিশনাল বিদ্যুৎ দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাদের মূল দাবি, অবিলম্বে স্মার্ট মিটার বাতিল করে পুরোনো মিটার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

স্মার্ট মিটার কী এবং কেন বিতর্কিত?
স্মার্ট মিটার হলো একটি আধুনিক বৈদ্যুতিন ডিভাইস, যা একটি সিমের মাধ্যমে কাজ করে। এটি বিদ্যুতের ব্যবহার, ভোল্টেজ স্তর সহ বিভিন্ন তথ্য রেকর্ড করে এবং সেই ডেটা সরাসরি রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কন্ট্রোল রুমে পাঠায়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে কন্ট্রোল রুম থেকে দূর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মিটার চালু বা বন্ধ করা যায়। প্রচলিত মিটারের মতো মাসের শেষে বিল পরিশোধের বদলে, স্মার্ট মিটারে গ্রাহকদের আগে টাকা রিচার্জ করতে হয়, যা এক প্রকার ‘প্রিপেইড’ ব্যবস্থার মতো। রিচার্জ না করালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতাও এই মিটারের রয়েছে।

এই আধুনিক প্রযুক্তি একদিকে যেমন বিদ্যুৎ দপ্তরের জন্য তদারকি সহজ করে, তেমনি গ্রাহকদের জন্য খরচ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ তৈরি করে। তবে, গ্রাহকদের মূল অভিযোগ, পুরোনো মিটারের তুলনায় স্মার্ট মিটারে তাদের বিল অনেক বেশি আসছে, যা তাদের দৈনন্দিন ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই অতিরিক্ত বিলের অভিযোগই বর্তমান বিতর্কের প্রধান কারণ।

আপাতত স্মার্ট মিটার স্থাপন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের ক্ষোভ কিছুটা হলেও প্রশমিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, বিদ্যুৎ দপ্তর এই সমস্যার সমাধানে কী পদক্ষেপ নেয় এবং ভবিষ্যতে স্মার্ট মিটার নিয়ে কী পরিকল্পনা করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy