
বীরভূমের রামপুরহাট বিধানসভার নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের কানাইপুর সংসদের এক হতদরিদ্র ব্যক্তি ধীরেন মালের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। পাঁচ বছর আগে তাঁর স্ত্রী মারা গেলেও ভোটার তালিকায় তিনি এখনও জীবিত। অন্যদিকে, ধীরেন মাল নিজে বেঁচে থাকলেও ভোটার তালিকায় তিনি মৃত বলে চিহ্নিত। এই ভুলের কারণে তিনি ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, পাচ্ছেন না সরকারি সুবিধাও। এমন অদ্ভুত পরিস্থিতিতে ধীরেন মাল এখন ভিক্ষা করে জীবনযাপন করছেন।
মৃত স্ত্রী ভোট দিচ্ছেন, জীবিত স্বামী বঞ্চিত
ধীরেন মালের স্ত্রী ভাসানি মাল পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, গত লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল। ভোটের সময় ভোটার তালিকা অনুযায়ী তাঁর ভোটও পড়েছে বলে দাবি পরিবারের। অন্যদিকে, ধীরেন মাল জীবিত থাকলেও ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে ভোটার কার্ড নিয়ে ভোট দিতে গেলে তাঁকে বুথ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, ভোটার তালিকায় তিনি মৃত বলে চিহ্নিত।
সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত
ধীরেন মালের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া। তাঁর স্ত্রীর নামে বার্ধক্য ভাতা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে, কিন্তু টাকা তোলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, ধীরেন মালকে মৃত ঘোষণা করায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন না। চরম আর্থিক সংকটে দিন কাটছে তাঁর। এই বয়সে বেঁচে থাকার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। ভিক্ষা করে কোনোমতে জীবনযাপন করছেন।
প্রশাসনের দরজায় হাহাকার
ধীরেন মাল প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে। কিন্তু এখনও তাঁর নাম ভোটার তালিকায় ওঠেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো ফল পাননি তিনি। তবে সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের নারায়ণপুর অঞ্চল সভাপতি মিলন শেখ বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিষয়টা আমরা জানি না। হয়তো স্ত্রীর নাম বাদ দিতে গিয়ে স্বামীর নাম বাদ দিয়েছে। তবে তাঁর নাম যাতে ভোটার তালিকায় ওঠে, তার ব্যবস্থা করবো। একই সঙ্গে যাতে বার্ধক্য ভাতা পায়, সেই বিষয়টাও দেখা হবে।”
রাজনৈতিক বিতর্ক
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শান্তনু মণ্ডল এই ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “ভোটার তালিকায় গড়মিলের বিষয়টি আমরাই প্রথম অভিযোগ করেছি। মৃত মানুষের ভোটেই তো তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে। তাছাড়া কানাইপুর সংসদ বিজেপি অধ্যুষিত। ফলে পরিকল্পিতভাবে ধীরেনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।”
ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবি
এই ঘটনা ভোটার তালিকার গাফিলতি এবং সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। ধীরেন মালের মতো অসংখ্য মানুষ ভোটার তালিকার ভুলের কারণে ভোটাধিকার এবং সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ভোটার তালিকা পরীক্ষা করে সংশোধন করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
ধীরেন মালের কষ্টের কাহিনি শুধু একটি পরিবারের গল্প নয়, এটি প্রশাসনিক অবহেলা এবং ভোটার তালিকা ব্যবস্থাপনার ত্রুটির একটি বড় উদাহরণ। আশা করা যায়, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া জোরদার হবে এবং ধীরেন মালের মতো মানুষেরা তাদের অধিকার ফিরে পাবেন।